Murshidabad

প্রস্তাবিত জেলা ভাগে সংখ্যালঘু প্রধান দুই অংশ

প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, জেলা ভাগের কথা উঠলেও জেলার কোন অঞ্চল কোন ভাগে পড়বে, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছুই বলা হয়নি।

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৪০
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জনবিন্যাসের প্রসঙ্গ তুলে মুর্শিদাবাদ ও মালদহ জেলাকে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি তোলা হয়েছে বিজেপির সাংসদ, বিধায়কদের মধ্যে থেকে। এ দিনও এই দাবিতে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষের নেতৃত্বে বহরমপুরে একটি মিছিল হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলাকে ভেঙে দুই বা তিনটি জেলায় ভাগ করার দাবিও সামনে এসেছে। ঘটনাচক্রে, ঠিক দু’বছর আগে, ২০২২ সালের ১ অগস্ট নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ জেলা ভাগের রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন। পরে অবশ্য প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে তিনি এই বিষয়টি কার্যত এড়িয়েই গিয়েছেন। তবে সম্প্রতি বিজেপির বাংলা ভাগের দাবির মধ্যে কংগ্রেস বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে নেমেছে।

Advertisement

বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে প্রথম জনবিন্যাসের প্রসঙ্গ তুলে পশ্চিমবঙ্গের দু’টি সংখ্যালঘু প্রধান জেলা মালদহ ও মুর্শিদাবাদকে রাজ্য থেকে আলাদা করে এবং বিহারের তিনটি জেলার সঙ্গে জুড়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি তোলেন। পরে তাঁকে সমর্থন করেন বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদের দুই বিজেপি বিধায়ক। বিজেপির একাংশের দাবি, ক্রমাগত অনুপ্রবেশের ফলে এই দুই জেলায় জনবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটেছে। বিজেপির সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এর ফলে চিনের মতো বহিঃশক্তির থেকে বিপদের কথাও বলেছেন।

যদিও তৃণমূলের তরফে বিজেপির এই দাবি উড়িয়ে পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলায় জিততে না পেরে এই রাজ্যকে ভাঙার ‘চক্রান্ত’ করছে কেন্দ্রের শাসক দল। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলা ভেঙে একাধিক জেলা তৈরির দাবি সামনে নিয়ে এসেছে কংগ্রেস। দু’বছর আগেকার প্রতিশ্রুতি মেনে শেষ পর্যন্ত রাজ্য প্রশাসন যদি মুর্শিদাবাদকে দুই বা তিনটি পৃথক জেলায় পরিণত করে, তা হলে জনবিন্যাস কোথায় দাঁড়াবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে বলা হচ্ছে, জেলা ভাগের কথা উঠলেও জেলার কোন অঞ্চল কোন ভাগে পড়বে, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছুই বলা হয়নি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ জেলার লোকসংখ্যা ৭১ লক্ষ তিন হাজার। ২০২৪ সালে এসে মনে করা হচ্ছে, সেই জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৭.১০ লক্ষে। এর মধ্যে ৬৩.৯০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত। প্রাথমিক ভাবে, মুর্শিদাবাদকে তিন ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব রয়েছে। গত চার বছর ধরেই জঙ্গিপুর মহকুমাকে আলাদা পুলিশ জেলা করে কাজ চলছে। সেই অংশটুকু জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হলে সেই জেলাও সংখ্যালঘু প্রধানই হবে। ২০১১ সালের জনগণনার প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে প্রাথমিক হিসেবে সেখানকার জনসংখ্যা হবে ২২ লক্ষ। যার ৬৮.২৫ শতাংশ সংখ্যালঘু। এর সঙ্গে লালগোলা ও নবগ্রাম যুক্ত হলে এলাকা ও লোকসংখ্যা বাড়বে। সংখ্যালঘুর অনুপাত সামান্য কমবে।

কান্দি মহকুমা এলাকাকে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে ধরলে দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সালের হিসেবে সেখানকার জনসংখ্যা ছিল ১১.৫৫ লক্ষ, যার মধ্যে সংখ্যালঘু ৪৮.৮ শতাংশ। বহরমপুর বা মুর্শিদাবাদ জেলা বহরমপুর, লালবাগ ও ডোমকল মহকুমা নিয়ে গঠিত হলে ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী সেই প্রস্তাবিত জেলার জনসংখ্যা হবে ৩৯.৭৫ লক্ষ। যার মধ্যে সংখ্যালঘু ৬৭.৪৮ শতাংশ।

ফলে, নতুন তিনটি প্রস্তাবিত জেলার দু’টিই হবে সংখ্যালঘু প্রধান।

কংগ্রেস অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা এই জেলা ভাগ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চালাবে। সে কথা জানিয়ে জঙ্গিপুর মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি হাসানুজ্জামান বাপ্পা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে দু’বছর হয়ে গেল, কিন্তু কিছুই হয়নি।” তাঁর আরও দাবি, “জেলার মানুষ চান, মুর্শিদাবাদ ভাগ হোক। আমরা তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছি।” কংগ্রেস-বিরোধীদের দাবি, সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে জেলায় পর্যুদস্ত হওয়ার পরে এই আন্দোলন সামনে রেখে তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ, তৃণমূলের খলিলুর রহমান বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেইছেন যে, জেলা ভাগ হবে। সে ক্ষেত্রে অহেতুক আন্দোলন করে কোনও লাভ নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement