—প্রতীকী চিত্র।
পরিষেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার কথা মাথায় রেখে রেকের চাহিদা বাড়তে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে। ওই মেট্রোয় বর্তমানে ১৪টি রেক থাকলেও আগামী বছর দেড়েকের মধ্যে আরও অন্তত সাতটি রেকের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানাচ্ছেন মেট্রোর কর্তাদের একাংশ। এর মধ্যে আগামী বছরের মে-জুন নাগাদ বেঙ্গালুরুর ‘ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেড’ (বিইএমএল) থেকে তিনটি রেক এসে পৌঁছনোর কথা। রাষ্ট্রায়ত্ত ওই সংস্থার কারখানায় এখন পুরোদমে নতুন রেকের নির্মাণকাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর শান্তনু রায়।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো সূত্রের খবর, চলতি বছরের শেষে হাওড়া থেকে এসপ্লানেডের মধ্যে পরিষেবা চালু করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। ওই পথে মহড়া দেওয়ার জন্য দু’টি রেক ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া, শিয়ালদহ থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টরের মধ্যে দৈনিক পরিষেবা দিচ্ছে পাঁচ থেকে ছ’টি রেক। আগামী বছরের মে অথবা জুন মাসের মধ্যে হাওড়া ময়দান থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টর— এই পুরো পথে পরিষেবা খুলে দিতে চান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ফলে, সেই সময়ে অনেক বেশি রেক দরকার হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। আধিকারিকদের মতে, দৈনিক পরিষেবার প্রয়োজন ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণ চলাকালীন ব্যবহারের জন্য বিকল্প রেক রাখাও জরুরি।
শুরুতে মেট্রো কর্তৃপক্ষের ভাবনা ছিল, রায়বরেলীর মডার্ন কোচ ফ্যাক্টরিকে তিনটি নতুন রেক তৈরির বরাত দেওয়া হবে। সেই মর্মে কিছু দিন দু’পক্ষে আলোচনাও হয়। কিন্তু রায়বরেলীর ওই কারখানায় উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব এবং মেট্রোর রেক তৈরিতে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না-থাকায় কর্তারা আর ঝুঁকি নিতে চাননি। এর পরেই ভারত আর্থ মুভার্স লিমিটেডকে নতুন তিনটি রেক তৈরির বরাত দেওয়া হয়। ওই সংস্থায় ছয় কামরার এক-একটি রেক তৈরিতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ পড়ছে।
ছয় কোচের প্রতিটি বাতানুকূল রেকের দৈর্ঘ্য ১২৪.৮ মিটার এবং প্রস্থ ২.৮৮ মিটার। ঘণ্টায় সর্বাধিক ৯৫ কিলোমিটার গতিতে ওই রেক ছুটতে সমর্থ হলেও মেট্রোপথে সেগুলি ছুটবে সর্বাধিক ৮০ কিলোমিটার ঘণ্টাপ্রতি গতিতে। স্টেনলেস স্টিলের তৈরি নতুন এই রেকে সিসি ক্যামেরা, মোবাইল চার্জিং পয়েন্ট, এলইডি আলো-সহ নানা সুবিধা থাকছে। এক-একটি রেক একবারে ২০৬৮ জন যাত্রী বহন করতে পারবে। এ ছাড়াও, আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার উপযোগী করে তৈরি করা হচ্ছে
এই রেক।
প্রথম দফায় তিনটি রেক এসে পৌঁছনোর পরে আরও চারটি রেকের বরাত দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে মেট্রো সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর স্ট্যান্ডার্ড গেজ লাইনে ছোটার জন্য রেকের সংখ্যা হবে ২১। এই প্রসঙ্গে বিইএমএল-এর চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর শান্তনু রায় বলেন, ‘‘যাত্রী পরিষেবায় উন্নততর স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখেই নতুন রেক আমরা তৈরি করছি।’’
বর্তমানে কলকাতা মেট্রোর জন্য রেক তৈরি করে চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (আইসিএফ)। সেই রেকই জোকা-তারাতলা এবং নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রোয়
ব্যবহার হওয়ার কথা। তবে আগামী দিনে কলকাতা মেট্রোর অন্য সব রুটে ব্যবহারের জন্য আরও ৮৫টি রেক কেনার অনুমতি দিয়েছে রেল বোর্ড। আইসিএফ এই মুহূর্তে পুরোদমে
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস তৈরিতে ব্যস্ত। ফলে, নতুন করে মেট্রোর রেক তৈরির সময় তাদের হাতে এখন কম। এই প্রসঙ্গে শান্তনু বলেন, ‘‘মেট্রোর আধুনিক রেক তৈরির অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তাই কলকাতা মেট্রোর ব্রডগেজ লাইনের জন্য রেক তৈরির বরাত এলে আমরা তা সরবরাহ করতে প্রস্তুত।’’