(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বরাহনগর ও ভগবানগোলা উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূলের দুই প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকারের শপথগ্রহণ সংক্রান্ত ‘জটিলতা’ কাটাতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কুণালের বেঁধে দেওয়া সেই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে সোমবার বেলা ৩টেয়। রাজনৈতিক মহলে এখন কৌতূহল, গত শুক্রবার কুণাল যা বলেছিলেন, তা কি মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে যাবে?
রাজ্যপালের উদ্দেশে খানিকটা হুঁশিয়ারির সুরেই শুক্রবার কুণাল বলেছিলেন, সোমবার বেলা ৩টের মধ্যে সায়ন্তিকারা যদি শপথ না নিতে পারেন, তা হলে মঙ্গলবার থেকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করবে দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলের ঘটনা। কুণাল সে সব ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে সেই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যপালের ‘যোগ’ থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য কুণাল তেমন জোরাল ভাবে কিছু বলেননি। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক বার রাজ্যপালের কাছে শপথ জটিলতা কাটানোর আর্জি জানিয়েছেন। আশা করব, রাজ্যপাল জটিলতা কাটাবেন।’’ সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরে আপাত ভাবে কুণালের এই বক্তব্য ‘নিরীহ’ লাগলেও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, কথা দেওয়া হয়ে গিয়েছে শুক্রবার। মঙ্গলবার এলে সবটা বোঝা যাবে।
উল্লেখ্য, রাজ্যপাল এখন কলকাতায় নেই। গত সপ্তাহে তিনি দিল্লি গিয়েছেন। সোমবার বিকেল পর্যন্ত তিনি শহরে ফেরেননি। রাজভবনও স্পষ্ট ভাবে জানায়নি, কবে বোস কলকাতায় ফিরবেন।
মাস দুয়েক আগে রাজভবনের এক অস্থায়ী মহিলা কর্মী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় শ্লীলতাহানি এবং যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন। সেই একই সময়ে দিল্লির ওই হোটেলে ঘটে-যাওয়া পুরনো একটি ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছিল শাসকদলের তরফে। অনেকের বক্তব্য, কুণাল সেই ঘটনার কথাই বলতে চেয়েছেন। এর মধ্যে সায়ন্তিকারা বিধানসভায় ধর্না দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, রাজ্যপাল বিধানসভায় পৌঁছে তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান অথবা স্পিকারকে দায়িত্ব দিন। রাজ্যপালের বক্তব্য, রাজভবনে পৌঁছেই হবু বিধায়কদের শপথ নিতে হবে। এই টানাপড়েনের মধ্যে স্পিকার বিমানও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি তথা বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে শপথ জট কাটাতে দরবার করেছেন। ধনখড়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন বিমান। কিন্তু জট খোলেনি। ফলে ভোটে জিতেও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিধায়ক হতে পারছেন না সায়ন্তিকা, রায়াত।
শপথ জটিলতা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গত সপ্তাহে নবান্নের প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘রাজভবনে যা কীর্তিকলাপ হয়, তাতে ওখানে মেয়েরা যেতে ভয় পায়।’’ জানা যাচ্ছে, এ নিয়ে মানহানির মামলাও করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন রাজ্যপাল বোস।