Cattle Smuggling

কেষ্ট-মামলায় মলয়ের সাক্ষ্য ‘অস্ত্র’ চার্জশিটে

বছরখানেক আগে বোলপুরের সিয়ান মুলুক পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর মৌজায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ১৫০ আসনের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০৮:০৫
Share:

অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।

বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য চালকল ও নানা ‘ভুয়ো’ সংস্থা মারফত বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তাঁকে টাকা জুগিয়েছেন বলে অভিযোগ। গরু পাচার মামলায় সেই মলয় পীটের বয়ানকেই অন্যতম প্রধান অস্ত্র করতে চলেছে সিবিআই। চার্জশিটে সাক্ষী হিসেবে নাম রয়েছে মলয়ের। যদিও তাঁর দাবি, কেন সাক্ষী করা হয়েছে, তা তাঁর জানা নেই।

Advertisement

বছরখানেক আগে বোলপুরের সিয়ান মুলুক পঞ্চায়েতের গোবিন্দপুর মৌজায় প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ১৫০ আসনের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ গড়ে ওঠে। কলেজটি যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার, সেটির কর্তা মলয়। ওই কলেজ বোলপুর মহকুমা হাসপাতালকে ‘টিচিং হাসপাতাল’ হিসেবে ব্যবহার করবে— এই মর্মে মউ সই হয় স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে। কলেজ তৈরির সময়ে ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’ বাবদ প্রায় ন’কোটি টাকা জমা রাখতে হয়। চার্জশিটে দাবি, ২০২১-এর অক্টোবরে টাকা দেওয়া হয়। অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যার অংশীদারিত্ব থাকা ‘ভোলেবোম’ চালকল থেকে প্রায় আড়াই কোটি এবং তিনটি ভুয়ো সংস্থা থেকে আরও প্রায় তিন কোটি টাকা দেওয়া হয় বলে দাবি। চার্জশিটে মলয়ের আর্থিক লেনদেনের নথি জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তদন্তকারীদের দাবি, গরু পাচারের লভ্যাংশ ঘুরপথে কলেজ তৈরিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল।

চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, মলয় তাদের জানিয়েছেন, তিনি যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, সেটি এবং অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দু’টি গাড়ি কিনেছিল। গাড়ির ঋণের কিস্তিও ওই দুই সংস্থা মেটায়। কিন্তু গাড়ি দু’টির নিয়ন্ত্রণ অনুব্রতের হাতেই ছিল বলে অভিযোগ। অনুব্রতের প্রয়াত স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে চার্জশিটে। তিনি ২০১৮-র মার্চ থেকে ২০২০-র জানুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে মোট বিল হয় প্রায় দু’কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। চার্জশিটে বলা হয়েছে, এক কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। অভিযোগ, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও কয়েকটি চালকলের অ্যাকাউন্ট থেকে তা মেটানো হয়। ১৮ লক্ষ টাকা নগদ দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং চালকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতেও নানা অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ। চার্জশিটে দাবি, ২০১৫-র পর থেকে অনুব্রত, তাঁর স্ত্রী ও কন্যার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও সংস্থার আয় দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ১৩টি অ্যাকাউন্টের নথি সিবিআই চার্জশিটে পেশ করেছে।

Advertisement

গরু পাচারে মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের সঙ্গে অনুব্রতের ফোনালাপের বিষয়েও চার্জশিটে বিশদ বলা হয়েছে। অনুব্রত তাঁর দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন ওরফে সাইকেলের ফোনে এবং এনামুল তাঁর ভাই আব্দুল হান্নানের ফোন থেকে যোগাযোগ রাখতেন। চার্জশিটে সেহগালের নামে দু’টি নম্বর ও হান্নানের নামে একটি নম্বরের উল্লেখ রয়েছে। ওই নম্বরগুলির মধ্যে কথোপকথনের প্রায় ৪০টি ‘ভয়েস কল রেকর্ড’ শনাক্ত করা গিয়েছে বলেও দাবি।

মলয় পীটের যদিও দাবি, ‘‘তদন্তকারীরা কেন আমার নাম চার্জশিটে সাক্ষী হিসেবে রাখলেন, তা আমার জানা নেই। এর কারণ ওঁরাই বলতে পারবেন। আমার সাক্ষী হওয়ার কোনও জায়গা নেই। আদৌ আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে কি না, তা-ও আমি এখনও জানি না।’’

(সহ-প্রতিবেদন: শুভাশিস ঘটক, সুশান্ত বণিক ও বাসুদেব ঘোষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement