সেজে উঠেছে সিউড়ির ১ নম্বর ব্লক অফিস। নিজস্ব চিত্র।
দেখে কে বলবে সরকারি অফিস!
চত্বরে ঢুকলেই মন ভাল হয়ে যেতে বাধ্য। হরেক শীতকালীন ফুলে ভরে আছে বাগান। সাদা দেওয়াল জুড়ে আঁকা রঙিন পটচিত্র। পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে উজ্জ্বল বিবেকানন্দের পূর্ণাবয়ব মূর্তি। গাছেদের গায়ে ‘কিউ আর কোড’ সংবলিত পরিচয় সাঁটা। পুকুরে মাছ, হাঁস পালন ও চারধারে আনাজ চাষ। সবেতে যত্নের চিহ্ন স্পষ্ট। পার্ক বা খামারবাড়ি নয়। এ ছবি বীরভূমের সিউড়ি ১ ব্লক অফিসের। নীল-সাদা সীমানা পাঁচিল পেরিয়ে চত্বরে প্রবেশ করলেই মন ভাল করা পরিবেশ। অফিসও
ঝকঝকে-তকতকে।
খোলা র্যাকের উপরে স্তূপাকৃতি পুরনো ফাইল। তার উপরে ধুলোর আস্তরণ। বিবর্ণ দেওয়ালের কোণে ঝুল। এই পরিবেশে কাজ করছেন আধিকারিক থেকে কর্মী। সরকারি অফিস বললে আগে চোখে এমন ছবি ভেসে উঠত। গত কয়েক বছরে অনেকটাই বদলেছে সরকারি অফিসের পরিবেশ। ঝকঝকে ভবন, মার্বেল বা টাইলস বসানো মেঝে। সুন্দর রং, মানানসই আসবাব নিয়ে সরকারি অফিসেও যেন কর্পোরেট ছোঁয়া লেগেছে। তার মধ্যেই যেন আলাদা করে নজর কাড়ে জেলা সদর লাগোয়া এই ব্লক।
বিডিও শিবাশিস সরকার বলছেন, ‘‘একটি ব্লক অফিসে প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে প্রচুর মানুষ আসেন। তাঁদের সুন্দর পরিবেশ দিতে ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির মিলিত চেষ্টা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি অফিসে বহু কর্মী রয়েছেন। যে জায়গা বা যে পরিবেশে থাকছি সেটা ভাল হওয়া খুব জরুরি।’’ সরকারি খরচের বাইরেও নিজস্ব তহবিলে আয় বৃদ্ধি করে কার্যত ভোল বদলেছে ব্লক চত্বরের। এমন কাজের প্রশংসা করেছেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘কাজের জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশ লাগে। সেটা গড়ে তুলতে বিডিও চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। বিশেষ করে চোখে টানে ওঁর নন্দন বোধ।’’ব্লক চত্বরে বাগান নতুন নয়। চার জন মালিও আছেন। বর্তমানে মূল চত্বরটিকে চার ভাগে ভাগ করে লাগানো হচ্ছে গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, ক্যালেন্ডুলা, জারবেরা, কসমস, স্যালভিয়া সহ মরসুমি ফুলের গাছ। গত বছর ফুলের বাগানের পিছনের দেওয়াল সাজাতে উদ্যোগী হন বিডিও। পটচিত্রের জন্য বিখ্যাত পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থেকে চিত্রকরদের আনিয়ে হারাতে বসা লোকশিল্প পটকে মানুষের সামনে তুলে ধরারও প্রয়াস হয়েছে। তাতে ফুটে উঠেছে আদিবাসী সংস্কৃতি।
এখানেই শেষ নয়। ব্লক চত্বরে বৃষ্টির জল আগে গিয়ে জমা হত। সেখানে একটি পুকুর কাটানো হয়। মাছ চাষ হচ্ছে। পাড়ে লাগানো হয়েছে আনাজ। জলে ঝাপটাচ্ছে খাকি ক্যাম্বেল হাঁসের দল। বিডিও বলেন, ‘‘নিকাশির সমস্যা মিটেছে। সঙ্গে মাছ, হাঁসের ডিম ও মাংস বিক্রি করে আয় বাড়ানো হয়েছে।’’