রাজ্য চেয়েছিল অননুমোদিত মাদ্রাসাগুলির নাম ও তথ্য সরকারি খাতায় তুলতে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পঞ্জিকরণ করিয়েছে ২৩৪টি মাদ্রাসা। এখন তাদের দাবি, সরকারচালিত (আলিয়া) মাদ্রাসাগুলির অনুরূপ সরকারি সুযোগসুবিধা তাদের দিতে হবে। উল্টো দিকে সরকারের যুক্তি, পঞ্জিকরণ করালে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা (খারিজি) মাদ্রাসাগুলি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কিছু সুযোগসুবিধা পাবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেটা যে কোনও ভাবেই সরকারচালিত মাদ্রাসাগুলির অনুরূপ নয়, বলে দেওয়া হয়েছিল তা-ও। ফলে এখন চাইলেই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।
এই চাপানউতোরের জেরে নতুন করে আন্দোলনের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওই ২৩৪টি মাদ্রাসা।
মুখ্যমন্ত্রী হয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের ১০ হাজার বেসরকারি মাদ্রাসার নাম সরকারি খাতায় তোলানো হবে। ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যালঘু এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর পঞ্জিকরণের পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে বলা হয়, পঞ্জিকরণ করালে মাদ্রাসাগুলি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা— যেমন পরিকাঠামো খাতে অর্থসাহায্য, সাংসদ তহবিল ও বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা পেতে পারবে। তার পরেই ২৩৪টি খারিজি মাদ্রাসা সরকারি খাতায় নাম নথিভুক্ত করে।
১০ হাজারের জায়গায় ২৩৪ কেন? রাজ্য মাদ্রাসা দফতরের এক কর্তা জানান, সরকার চেয়েছিল খারিজি মাদ্রাসাগুলির তথ্য এক জায়গায় আসুক। সরকার মনে করেছিল এমন মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার হতে পারে। এখনও অনেক খারিজি মাদ্রাসারই পঞ্জিকরণ হয়নি। তবে হলেও সংখ্যাটা ১০ হাজার ছোঁবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। ওই কর্তার কথায়, সরকারের লক্ষ্য ছিল, বেসরকারি খারিজি মাদ্রাসার তথ্যপঞ্জি তৈরি করা এবং রাজ্যে আরও কেন্দ্রীয় অনুদান আনার ব্যবস্থা করা। কারণ পঞ্জিকরণ না হলে বেসরকারি মাদ্রাসার জন্য কেন্দ্রের অর্থসাহায্য পাওয়া যায় না।
এখন ওই ২৩৪টি মাদ্রাসা দাবি করছে, সরকারচালিত মাদ্রাসাগুলির সমান সুযোগসুবিধাই তাদের দেওয়া হোক। কেউ কেউ আদালতেও গিয়েছে। সরকারি অনুদানের দাবিতে অনশনও করেছে ‘পশ্চিমবঙ্গ আনএডেড মাদ্রাসা বাঁচাও কমিটি’। কমিটির সম্পাদক আব্দুল ওহাব মোল্লা দাবি করছেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘স্কিম ফর প্রোভাইডিং কোয়ালিটি এডুকেশন অব মাদ্রাসা’র (এসপিকিউইএম) টাকা তাঁরা একবারই পেয়েছিলেন ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষে। প্রথম বার অনুদান পাওয়ার এক বছরের মধ্যে পরবর্তী অনুদানের জন্য কেন্দ্রে কাছে আবেদন করতে হতো রাজ্যতে। রাজ্য তা করেনি বলে মাদ্রাসাগুলির অভিযোগ।
রাজ্য সরকার কেন কেন্দ্রের অনুদান চেয়ে পাঠাল না? মাদ্রাসা দফতরের ওই কর্তা দাবি করছেন, পঞ্জিকৃত মাদ্রাসাগুলি পূর্ণাঙ্গ সরকারি অনুদান চাইতে শুরু করার ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। পঞ্জিকরণের ঝটিতি পরেই ২০১৩ সালে কিছু মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন-সহ সমস্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করে। রাজ্যও থমকে গিয়েছে। পঞ্জিকরণের কাজও আর এগোয়নি। মামলাটি বিচারাধীন।
এর আগে যখন আন্দোলনকারী কমিটি অনশনে বসে, সরকার তখন তাদের দাবি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সব দিক খতিয়ে দেখে এখনও সংখ্যালঘু মন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বলছেন, ‘‘নতুন করে আর কোনও অনুদান দেওয়া সম্ভব নয়।’’ রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, রাজ্যে যে ৬৪০টি সরকারি (আলিয়া) মাদ্রাসা আছে, তার পাঠ্যক্রম থেকে পরিকাঠামো সবই সরকার সামলায়। খারিজি মাদ্রাসার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। দফতরের ওই কর্তার কথায়, পাঠ্যক্রম না বদলিয়ে কমিটির নিয়ন্ত্রণ সরকারকে না দিয়ে সরকারি অনুদান চাইলে তা দেওয়া হবে না বলেই মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।