হাই কোর্টের বিচারপতির তাঁর ‘লন্ডনের বাড়ি’ নিয়ে মন্তব্যের পর মঙ্গলবারই আদালতে এসেছিলেন মানিক। ফাইল চিত্র।
আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হোক—আদালতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এ কথাই বললেন। জোর গলায় বললেন, ‘‘বলা হচ্ছে, লন্ডনেও নাকি একটা বাড়ি আছে আমার। আমি বলছি, সত্যিই যদি লন্ডনে বা অন্য জায়গায় আমার বাড়ি থাকে, তবে আমাকে ঝুলিয়ে দিক।’’ স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে অভিযুক্ত মানিক জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে যা চলছে, তাতে তাঁর সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে।
মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে শুনানি ছিল মানিকের। বিচারক এজলাস থেকে বেরিয়ে যেতেই ক্ষোভ, আক্ষেপ, হতাশা ঝড়ে পড়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিকের গলায়। আদালতে দাঁড়িয়ে আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমার অন্য জায়গায় বাড়ি থাকলে আমায় ঝুলিয়ে দিক। নদিয়াটা কি লন্ডন অধিগ্রহণ করেছে?’’ কেন এমন বললেন মানিক?
গত সপ্তাহেই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ মামলার শুনানিতে মানিক প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি মন্তব্য করেছিলেন। বিচারপতি সিবিআইকে বলেছিলেন, মানিক সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য তো তিনিই জানেন। সে সব সিবিআই তদন্তে উঠে আসছে না কেন? কী তথ্য, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা না করে বিচারপতি কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন সিবিআইকে। জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘কত বার লন্ডনে গিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য? তাঁর বাড়ির ঠিকানা জানেন? আমি বলতে পারি। শুনবেন? লন্ডনে তাঁর বাড়ির পাশে কার বাড়ি জানেন? আমি জানি।’’
হাই কোর্টের বিচারপতির সেই মন্তব্যের পরই মঙ্গলবার আদালতে এসেছিলেন মানিক। সেখানে লন্ডনের বাড়ি প্রসঙ্গে বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেন। মানিক বলেন, ‘‘১৯৮৯ সালে যাদবপুরে একটা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম। পরিবার বড় হওয়ার পর বড় ফ্ল্যাট নেওয়া হয়। এ ছাড়া নদিয়াতে বাড়ি আছে। আমি সিবিআইকে তো সবই জানিয়েছি।’’ মানিকের এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে তবে ব্যাঙ্কশাল আদালতের কোর্ট রুমে দাঁড়িয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতিকেই জবাব দিলেন মানিক?
এর আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই মানিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রাথমিক পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে। মানিকের সম্পত্তির হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মানিক বিচারপতির নাম না করলেও অনেকেই মনে করছেন, মানিকের এই ব্যাখ্যা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশেই।
মঙ্গলবার অবশ্য বাড়ি নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাশিই মানিকের দু’টি বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে সিবিআই যে দাবি করেছিল, তারও জবাব দিয়েছেন মানিক। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই সিবিআই জানিয়েছিল, মানিকের দু’টি বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে। সে প্রসঙ্গে মানিকের বক্তব্য, ‘‘আমি কি পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষকে ঠকিয়েছি? একটা পাসপোর্টের উপর আরেকটা পাসপোর্ট আছে? দু’টো পাসপোর্ট থাকলে সরকার দেখেনি? বাড়িতে থাকলে এর প্রমাণ দিতাম। কিন্তু আমি তো সেলে।’’
তবে মঙ্গলবার মানিক তার বিরুদ্ধে ওঠা নানারকম অভিযোগের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাঙ্কশাল কোর্টে দাঁড়িয়ে তাঁর হতাশার কথাও জানিয়েছেন। কোর্টরুমে বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার সামাজিক সম্মান চলে যাচ্ছে। আমি কত জ্বলবে বলুন। আমি কারও নাম নিচ্ছি না। আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হোক।’’