কাজে ফিরবেন না কি বাড়িতে বসেই বেতন পাবেন চাকরি যাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রতীকী ছবি।
চেনা স্যর-ম্যাডামরা আচমকাই স্কুল ছেড়েছিলেন, তাদের কি আবার প্রাথমিক স্কুলের গেট পেরিয়ে ঢুকতে দেখা যাবে? ক্লাসরুমে এসে আবার পড়াতে দেখা যাবে ছাত্র-ছাত্রীদের? টেট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের মঙ্গলবারের রায়ের পর এই প্রশ্ন উঠছে। ছাত্র-ছাত্রী বা স্কুলগুলি তো বটেই, চাকরি যাওয়া শিক্ষকেরাও তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন কাল অর্থাৎ বুধবার থেকে তাঁরা কী করবেন? তাঁরা কি হারানো চাকরি ফিরে পেলেন, না কি পুরোটাই সোনার পাথরবাটি! উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল আইনজীবীদের মধ্যেও দ্বিমত রয়েছে। এক দলের যুক্তি— চাকরি ফিরেছে যখন কাজেও যাবেন। অন্য দলের বক্তব্য— আগে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে এই শিক্ষকদের।
আইনজীবীদের একাংশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ব্যাখ্যা করে বলেছেন, চার সপ্তাহের জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই নির্দেশ চূড়ান্ত নয়, অন্তর্বর্তী কালীন নির্দেশ। ফলে প্রাথমিকের শিক্ষকেরা হয়তো খাতায় কলমে আবার চাকরি ফিরে পেলেন, হয়তো বেতনও পাবেন আবার। কিন্তু এখনই স্কুল তাদের ফেরাবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ থাকছে। যুক্তি হিসাবে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এঁদের চাকরি বরখাস্তের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু এঁদের ওই মামলায় পক্ষ হিসাবে যুক্ত করতেও বলেছেন। ফলে এই শিক্ষকদের কাছে জানতে চাওয়া হবে, এঁরা কেন অযোগ্য নয়। সে ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রমাণ না দেওয়া পর্যন্ত এঁদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা কম। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার তা রাজ্যই নেবে।
এ প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতের নির্দেশের একটি অংশ তুলে ধরে আইনজীবী আশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘চাকরি গিয়েছে এমন ২৬৯ জনকে মামলায় যুক্ত করতে বলেছে আদালত। পরবর্তী কালে তাঁদের বক্তব্য শুনে আদালত যে রায় দেবে তা মেনে রাজ্য পুনরায় নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’’ যদিও আইনজীবীদের অন্য পক্ষ এই বিষয়ে সহমত নন।
আইনজীবীদের অন্য অংশটির দাবি, কলকাতা হাই কোর্ট এই শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেও সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ফলে এঁদের চাকরি যাওয়ার যে নির্দেশ তা আপাতত গণ্য হবে না। বেতন তো তাঁরা পাবেনই। চাইলে বুধবার থেকেই কাজেও যেতে পারেন। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট এক মাসের জন্য অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের মেয়াদ পরবর্তী শুনানিতে আরও বাড়তে পারে। হয়তো দেখা গেল, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত তথ্য প্রমাণ হাতে না আসা পর্যন্ত এই মেয়াদ বাড়তেই থাকল। সে ক্ষেত্রে কি এঁদের কাজ ছাড়াই বেতন দেওয়া হবে? আইনজীবীদের যুক্তি সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাঁদের কাজে যোগ দেওয়াটাই অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে।
শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দু’পক্ষের আইনজীবীদের এই বক্তব্যের মধ্যে অবশ্য পুরোটাই ধোঁয়াশাতেই থেকে যাচ্ছে। তবে আইনজীবীরা মনে করছেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিক্ষা দফতরকেই।