আমার মন্ত্রী হওয়াটাই অপরাধ! আদালতে বললেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
আদালতে নিজের হয়ে সওয়াল করলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থকে সওয়াল করার জন্য পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছিলেন বিচারক। বিচারকের কাছে তিনি জানতে চাইলেন, মন্ত্রী হওয়াই কি তাঁর অপরাধ? বৃহস্পতিবার আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে বিচারক এবং পার্থের সেই কথোপকথন যে ভাবে এগোল:
বিচারক: পার্থবাবু, আপনি কিছু বলবেন বলছিলেন...
পার্থ: ৮ মাস ধরে গুহার মধ্যে আছি। নিজেই অবাক হচ্ছি। আগে যখন বাড়ি থেকে বেরোতাম, বেরোনোর আগে আমার দেবতার কাছে মাথা ঠুকতাম। তখন সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করত, কোথায় যাচ্ছিস পার্থ? বলতাম, পাথরে মাথা ঠুকতে। প্রতিমাই পাথরের প্রাণ। আমি বলছি, যা-ই ঘটুক না কেন, আমার বিষয়ে যা-ই ঘটুক না কেন, সত্য একদিন প্রকাশিত হবে। আসলে আমার মন্ত্রী হওয়াটাই অপরাধ! (পার্থ থেমে আবার বলতে শুরু করেন) আমি খুব ভাল ছাত্র ছিলাম বলা যাবে না। আবার খারাপও বলা যাবে না। আমি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছি। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পাশ করে কেন্দ্রীয় সংস্থায় কাজ করেছি। স্যর, কী অপরাধ? তা হলে আমার মন্ত্রী হওয়াই কি অপরাধ?
বিচারক: আপনি কি দুঃখের কথা বলবেন? যা-ই বলুন, বুঝে কথা বলুন। যা বলবেন আমাকে অর্ডারে রাখতে হবে। (আপনার) বিরুদ্ধেও যেতে পারে।
পার্থ: ৭০ বছরের উপর বয়স আমার। থানায় অভিযোগ নেই। বিরোধী দলনেতা ছিলাম। আমাকে কখনও ‘অসৎ’ বলতে পারেনি কেউ। কিন্তু এখন সে কথা শুনতে হচ্ছে। আইনের ছাত্র হিসাবে বলছি, আট মাস কোনও কিছুর ‘প্রাইমা ফেসি’ থাকে কি! ‘প্রাইমা ফেসি’ মানে কী? ৫ মাস পরে তদন্তে আমার নাম আসা ‘প্রাইমা ফেসি’ থাকে কী করে? আইনের ছাত্র হিসাবে প্রশ্ন করছি। ৮ মাস বিনা বিচারে থাকব। জীবদ্দশায় এই বিচার দেখে যেতে পারব কি না জানি না। কোথায় চলে যাব? এখানে বড় হয়েছি। একটা বংশপরিচয় আছে। আমি কোথায় চলে যাব...? আমি কোথায় পালিয়ে যাব? আমার মামা সাহিত্যিক। কোথায় চলে যাব? শুধু কি রাজনৈতিক নেতারা প্রভাবশালী?
বিচারক: রাজনীতির বিষয়ে এখানে বলবেন না।
পার্থ: আপনার হাতে ক্ষমতা আছে...। আপনার উপর ভরসা রাখছি। আইনের উপর ভরসা রাখছি।
বিচারক: আমি আইনের বাইরে যেতে পারব না।
পার্থ: আমি নিয়োগকর্তা নই। শুধু এটুকু ভাববেন। বোর্ডের উপরে আমি এগ্জ়িকিউটিভ অথরিটি নই।
এখানেই কথোপকথন শেষ হয়। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে শুনানি ছিল পার্থের মামলার। সেখানে পার্থের জামিনের জন্য আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তালিকায় কেন পার্থের নাম থাকা উচিত নয়, তার পক্ষে সওয়ালও করেন। তবে আদালতে পার্থ নিজেও কথা বলেন। বিচারককে পার্থ বলেন, ‘‘স্যর, আপনি সে দিন আমাকে অনুমতি দিয়েছিলেন কিছু বলার। আজ আমার আইনজীবী যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমিও কিছু বলতে চাই।’’ এর পর আদালতের শুনানিতে কিছু ক্ষণের জন্য বিরতি নেওয়া হয়। পার্থ সেই সময় বিচারকক্ষের বাইরে বের হলে সাংবাদিকরা জানতে চান, তিনি কিছু বলতে চান কি না। তার জবাবেই পার্থ উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘যা বলার ফিরে এসে বলছি।’’ তার পরেই বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ পাঁচ মিনিট সময় পেয়ে কথা বলতে শুরু করেন পার্থ।