দলের একাংশের বিরুদ্ধে আবার ক্ষোভ উগরে দিলেন তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা। ফাইল চিত্র।
দলের একাংশের বিরুদ্ধে আবার ফাঁসানোর অভিযোগ তুললেন নদিয়ার তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। সরাসরি তোপ দাগলেন ‘নব্য তৃণমূলে’র দিকে। নিজেকে দলের পুরনো সৈনিক বলে পরিচয় দিয়ে তাপসের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে থাকলেও, ২০১৬-র পর যাঁরা দলে এসেছেন, চক্রান্ত করছেন তাঁরাই।
বুধবার বিধানসভায় একটি কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন তাপস। সেখানেই তিনি বলেন, “নব্য তৃণমূল আমায় ফাঁসিয়েছে। যাঁরা ২০১৬ সালের পরে এসেছেন, তাঁরা এই চক্রান্ত করছেন।” তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আগেই সরব হয়েছিলেন জেলা রাজনীতিতে তাপসের বিরোধী বলে পরিচিত, তৃণমূল পরিচালিত নদিয়া জেলা পরিষদের সদস্য টিনা ভৌমিক সাহা। বুধবার সেই টিনার বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন তাপস। তাঁর কথায়, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে চিঠি লিখেছি। তাঁর অফিসে ডোনা নামে একজন কাজ করেন, যে টিনার ঘনিষ্ঠ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পাশে আছেন। আমি জানি। দল আমরা তৈরি করেছি। আমার কেস আমায় লড়তে হবে। আমাকে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে হবে। আমি টিনার এই প্রভাবশালী হওয়ার বিষয়টা সিবিআইকে জানিয়েছি।”
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাপসের বিরুদ্ধে। রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে তাপসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগের জেরেই গত শুক্রবার, ইদের আগের দিন বিকেলে তাপসের তেহট্টের বাড়িতে বিশেষ অভিযান চালায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ১২ জন আধিকারিক তল্লাশি করেন তাপসের বাড়ি, তাঁর আপ্তসহায়কের বাড়ি, এমনকি, বাড়ির পাশের পুকুরপাড়েও। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ তাপসের বাড়িতে শুরু হয়ে, পর দিন ভোর সওয়া ৬টা পর্যন্ত চলে সিবিআইয়ের তল্লাশি এবং তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। তবে প্রায় ১৫ ঘণ্টার ওই অভিযানের পর তাপসের বাড়ি থেকে কিছু নথি পাওয়া গেলেও তাপসকে সে দিন গ্রেফতার করেনি সিবিআই। পরে তাপস দাবি করেছিলেন, সিবিআই তাঁকে বলেছে, তিনি নাকি ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার’। যদিও সিবিআই সূত্রে এই দাবির কোনও সত্যতা মেলেনি। এর মধ্যেই তাপসকে কলকাতায় ডেকে পাঠায় সিবিআই। তলব পেয়ে গত মঙ্গলবার তাপস হাজির হন নিজামে প্যালেসে।
গত শনিবারই দলের প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে নতুন কেনা ফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে তাপস বলেছিলেন, ‘‘দিদি ছাড়া অন্য কাউকেই (তৃণমূলের মধ্যে) আমার প্রয়োজন নেই। আমার লড়াই আমি একাই লড়ব। আর থাকবেন সাধারণ মানুষ।’’ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে তেহট্টের বিধায়কের ক্ষোভের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল তখনই।