প্রতীকী ছবি।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা ডিএলএড পাঠ্যক্রম শেষ করেও শংসাপত্র পাচ্ছেন না। অভিযোগ, যে-কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিএলএড প্রশিক্ষণ দেয়, সেই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং বা এনআইওএস সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছে, শুধু প্রশিক্ষণ নিলেই হবে না। ২০১৯-এর মে মাসের মধ্যে ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যে-সব প্রার্থী বা শিক্ষক তাঁদের উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর ‘আপগ্রেড’ করে (ফের পরীক্ষা দিয়ে নম্বর বাড়ানো) ৫০% করেছেন, শুধু তাঁরাই এই শংসাপত্র পাবেন।
ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের একাংশের অভিযোগ, হঠাৎ এ ভাবে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় বহু শিক্ষক উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট আপগ্রেড করার সুযোগ হারাচ্ছেন। বিপন্ন হয়ে পড়ছে কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার রুজিরোজগার। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই তুঘলকি সিদ্ধান্তে বহু প্রাথমিক শিক্ষকের কর্মজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।’’
২০১৭ সালে তখনকার কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, দেশের সব প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সহায়ক-সহায়িকাদের ডিএলএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনআইওএস-কে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদও ২০১৭-র ৩০ অগস্ট তারিখ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, রাজ্যের সব প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক-শিক্ষিকাকেই ডিএলএড পাঠ্যক্রমে ভর্তি হতে হবে। কর্মরতদের মধ্যে যাঁদের উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০% নম্বর নেই অথচ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে, তাঁদের ডিএলএড করতে হলে উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ শতাংশ নম্বর ‘আপগ্রেডেশন’ করতে হবে না।
কিন্তু পরে এনআইওএস জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকে যাঁদের ৫০% নম্বর নেই, তাঁরা স্নাতক হলেও তাঁদের ফের পরীক্ষা দিয়ে ৫০% নম্বর পেতেই হবে। নইলে তাঁরা ডিএলএড শংসাপত্র পাবেন না। ফলে উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০% নম্বর না-থাকা বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা বিপাকে পড়েন। নম্বর বাড়াতে বাধ্য হয়েই তাঁদের অনেকে এনআইওএস বা রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
অভিযোগ, কোন তারিখের মধ্যে এই বাড়তি নম্বর তুলতে হবে, আগে এনআইওএস কিন্তু তার সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। ডিএলএড প্রশিক্ষণ যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁদের পক্ষে প্রসেনজিৎ রায় বলেন, ‘‘গত ৭ অগস্ট এনআইওএস হঠাৎই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় বহু শিক্ষক-শিক্ষিকার মাথায় হাত পড়েছে। এত দিন নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা না-থাকায় তাঁরা বাড়তি নম্বরের সংস্থান করে উঠতে পারেননি। আমাদের দাবি, যাঁরা ২০২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিএলএড প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের সকলকে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল আপগ্রেড করার সুযোগ দিতে হবে।’’
নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহন দাস পণ্ডিত বলেন, ‘‘ডিএলএড করেও যদি সার্টিফিকেট না-মেলে, এই প্রশিক্ষণের কোনও গুরুত্বই থাকবে না। এই বিষয়ে এনআইওএসের কলকাতার অফিসে গিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।’’ বক্তব্য জানতে এনআইওএসের কলকাতার অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি।