শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব ছবি।
বিদুৎ দফতরের সাধারণ কর্মী। চাকরির সুবাদে বছরে তাঁর আয় ২ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। কিন্তু তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়-ব্যয়ের কোনও সাযুজ্য পাচ্ছে না এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কী ভাবে বছরে ওই সীমিত উপার্জনের পরেও ধাবা, হোমস্টের মালিক হতে পারেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা? ইডি বলছে এখনও তার সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি হুগলির ওই যুব তৃণমূল নেতা।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শাসকদলের একের পর এক নেতার নাম জড়াচ্ছে। তার নবতম সংযোজন এই শান্তনু। শুক্রবার রাতে তাঁকে গ্রেফতারের পর শনিবার আদালতে হাজির করানো হলে ২ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। শান্তনুর আয়ের সঙ্গে তাঁর এবং স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বিশাল ফারাক। ইডি সূত্রে খবর, গত জানুয়ারি মাসে শান্তনুর বাড়িতে তল্লাশির পর আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য দেন তিনি। তাতে দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু সম্পত্তি তিনি নিজে কিনেছেন। এবং পরে সেগুলি স্ত্রীর নামে করেছেন। কী ভাবে ওই সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন শান্তনু ও তাঁর স্ত্রী? ইডি সূত্রে খবর, এ সবই হয়েছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টাকায়।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে শান্তনুর। আর সে সবই নিয়োগ দুর্নীতির টাকার বিনিয়োগ থেকে উঠে এসেছে বলে অভিযোগ শান্তনুর প্রতিবেশীদেরই। সেই সঙ্গে ক্ষমতার দাপটও ছিল। জিরাটে শান্তনুর বাড়ির কাছে বারুইপাড়ায় রয়েছে ‘দ্য স্পুন’ নামে আধুনিক রেস্তরাঁ এবং ধাবা। ওই ধাবাটি তৈরি হয় ২০২১ সালে। যে জায়গার উপর ওই ধাবা, সেখানে এক সময় ৪টি পরিবারের বসবাস ছিল। জমি কিনে ওই পরিবারগুলিকে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতি মানা হয়নি। আবার জমি কেনার জন্য রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া বলাগড়ের চাঁদরা-বটতলা অঞ্চলে গঙ্গাপারে বিশাল একটি রিসর্ট আছে। সেটিও শান্তনুদের বলেই দাবি স্থানীয়দের।
বিদ্যুৎ দফতরের এক জন সাধারণ কর্মচারী হয়েও শান্তনুর জীবনযাপন ছিল রাজকীয়। দামি গাড়ি, দামি বাড়ি, রেস্তরাঁ, রিসর্ট, হোমস্টে, জমিজায়গা, ফ্ল্যাট— এত কিছুর মালিক হওয়া কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে খোঁচা দিচ্ছে বিরোধীরা। সেই সুরে সুর মেলালেন বলাগড় ব্লকের তৃণমূল সহ-সভাপতি তপন দাস। শান্তনুর আয় এবং তাঁর সম্পত্তির হিসাব স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও চোখে লাগছিল বলেও জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শান্তনুর লাইফস্টাইল নিয়ে বিড়ম্বনায় ছিল দল। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি ছিল না। তাই কথা শুনতে হত।’’ এমনকি, তৃণমূল নেতার গ্রেফতারির এক দিনের মধ্যেই তিনি বলছেন, ‘‘শান্তনুর অনুপস্থিতিতে দল আরও চাঙ্গা হবে।’’