ছেলের কীর্তিতে অবাক মা, ছাত্রকে ক্ষমা কাফির

শনিবার লক্ষ্মীরানি বলেন,  “স্যারের নাম করে খুব প্রশংসা করত ছেলে। বলত, খুব ভাল পড়ান। ছাত্রদের খুব ভালবাসেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ কেন রাজেশ করল বুঝতে পারছি না।” 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

মাস্টারমশাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকত ছেলে। সেই ছেলেই কী ভাবে মাস্টারমশাইয়ের গায়ে তুলল, তা ভেবে পাচ্ছেন না আরামবাগের লক্ষ্মীরানি সাঁতরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক আব্দুল কাফিকে মারধরের অভিযোগে লক্ষ্মীরানির ছেলে রাজেশ সাঁতরাকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার আলিপুর আদালত তাঁকে দু’দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে।

Advertisement

শনিবার লক্ষ্মীরানি বলেন, “স্যারের নাম করে খুব প্রশংসা করত ছেলে। বলত, খুব ভাল পড়ান। ছাত্রদের খুব ভালবাসেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে এমন আচরণ কেন রাজেশ করল বুঝতে পারছি না।” রাজেশের বাবা বংশীবদন সাঁতরা পূর্ত দফতরের কর্মী। ছেলের এমন কীর্তির খবর পেয়ে শুক্রবার রাতেই কাফিকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। এ দিন সকালেই কলকাতায় এসেছিলেন।

লক্ষ্মীরানি জানান, রাজেশ পড়াশোনা নিয়েই থাকতেন। চাকরির পরীক্ষাও দিচ্ছেন। শুক্রবার সকালে বই কিনতে কলেজ স্ট্রিট যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মা এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ছেলের ঘটনা জানতে পারেন। লক্ষ্মীরানি বলেন, “ছেলের মানসিক কোনও অসুবিধা নেই। একদিন খালি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক কোনও অসুস্থতার কথা তো বলেননি।’’

Advertisement

আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক হওয়ার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রাজেশ। তাঁর কলেজের সহপাঠী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “রাজেশ মেধাবী ছাত্র। কলেজেও শিক্ষকরা ওকে খুব ভালবাসতেন। কোনও দিন কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখিনি। তবে অভিমানী ছিল।’’

রাজেশের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে কাফি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এমন কথা বাতাসে ভাসিয়ে দেবেন না দয়া করে। তাতে ছেলেটির ক্ষতি হয়ে যেতে পারে অকারণে।’’ রাজেশকে যেন বড় কোনও সাজার মুখে ঠেলে না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারেও পুলিশকে অনুরোধ করেছেন তিনি। কাফি জানিয়েছেন, রাজেশের বাবাও এই ঘটনায় স্তম্ভিত, দুঃখিত। কাফি লিখেছেন, ‘‘আমি বামপন্থী রাজনীতির সমর্থক। আমার তিন পুরুষ মাস্টারি করে এসেছেন। আমি আর কী চাইতে পারি?’’ শুক্রবার কাফির উপরে হামলার পরেই রাজেশের উপরে মারমুখী হয়েছিলেন যাদবপুরের এক দল পড়ুয়া। তখনও কাফি তাঁকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন।

কাফি ফেসবুকে লিখেছেন, দিন কুড়ি আগে ফেসবুকে মেসেজ করে ‘অতি কদর্য ভাষায়’ তাঁকে এবং শাশ্বত ভট্টাচার্য নামে আরেক শিক্ষককে গালাগাল দেন রাজেশ। হুমকিও দেন।। গত ২০ জুলাই সকালে কাফির ফ্ল্যাটে চড়াও হন তিনি। প্রতিবেশীরা এসে পড়ায় রাজেশ চলে গিয়েছিলেন। তখন বিষয়টি পুলিশকে জানাননি কাফি। তিনি জানিয়েছেন, রাজেশের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বা ফোন নম্বর পাননি। শুক্রবার প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন রাজেশ। তার পরেই কাফির উপরে চড়াও হন।

রাজেশের সম্পর্কে কাফি লিখেছেন, ‘‘আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই। ওর অস্থিরতার কারণ জানতে চাই। ও যদি অসুস্থ হয়ে থাকে তাহলে ওর নিরাময় চাই।’’ পুলিশ জানিয়েছে, কাফি তাঁকে বিভিন্ন পরীক্ষায় কম নম্বর দিয়েছেন বলে রাজেশের দাবি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় জানিয়েছেন, কাফির উপর আক্রমণের প্রতিবাদে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কালো ব্যাজ পরেই কাজ করবেন। প্রতিবাদ মিছিলেরও ডাক দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement