দলনেত্রী: সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী জানুয়ারিতে ব্রিগে়ড সমাবেশে সনিয়া, রাহুল গাঁধী-সহ তাবড় বিরোধী নেতৃত্বকে একমঞ্চে হাজির করতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের ‘শহিদ সমাবেশে’র মঞ্চ থেকে অদূর ভবিষ্যতের ওই রূপরেখা এঁকে শনিবার তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘‘উনিশে পা দিয়ে উনিশের জন্য ব্রিগে়ড হবে। ভারত দখলের ডাক দেওয়া হবে ১৯ জানুয়ারির ব্রিগে়ড থেকে। সব দলকে আমরা নিয়ে এসে বিরোধী ঐক্যকে সংহত করব।’’
পরে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘ওটা হবে বিরোধী কনক্লেভ। সনিয়া, রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী দলের সব নেতাকেই আমন্ত্রণ করব। কোনও ভেদ-বিচার থাকবে না।’’ আটের দশকে ফারুখ আবদুল্লা, এন টি রাম রাও, রামকৃষ্ণ হেগড়ের মতো অ-কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে কলকাতায় কনক্লেভ করেছিলেন তৎকালীন বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। বিজেপির মোকাবিলায় মমতার উদ্যোগ সেই ইতিহাসকেই মনে করাচ্ছে।
সিপিএম অবশ্য প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, তৃণমূলের যাবতীয় নীতি এ রাজ্যে বিজেপির উত্থানেই মদত দিচ্ছে। মমতার ‘মহা-উদ্যোগে’ তাদের আস্থা নেই। আর প্রদেশ কংগ্রেসের বক্তব্য, এই সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দলের সর্বভারতীয় স্তরেই হয়ে থাকে।
জনসমুদ্র: তৃণমূলের ২১শে জুলাইয়ের জনসভা। শনিবার ধর্মতলায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
বিজেপি-বিরোধিতায় মমতার কনক্লেভের উদ্যোগে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বাংলায় তা হলে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগের সম্ভাবনা আসতে পারে কি? কারণ, বিজেপি-বিরোধী প্রধান দল হিসেবে কংগ্রেসের অস্তিত্ব আছে সব রাজ্যেই। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এমন সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিচ্ছেন। এই ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, ‘‘দলনেত্রী তো গোড়া থেকেই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন— বিজেপির মোকাবিলায় যেখানে যে শক্তিশালী, তাকে জায়গা ছা়ড়তে হবে। তিনি এ দিনও বলেছেন, প্রয়োজনে একলাই চলতে হবে। বাংলায় একক শক্তি হিসেবে তৃণমূল পরীক্ষিত। আমরা কি রাজস্থান বা গুজরাতে কংগ্রেসের কাছে আসন চাইতে যাব?’’
জনজোয়ার: ছাতা মাথায় একুশে জুলাইয়ের সভায়। শনিবার ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
সেই সূত্র মেনেই মমতা এ দিন প্রকাশ্যেই বলেছেন, দিল্লিতে তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন আর বাংলায় বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেস তৃণমূলের বিরোধিতা করবে— এই জিনিস চলবে না! বস্তুত, তাঁর এ দিনের আহ্বান, পঞ্চায়েতে ২০টি জেলা পরিষদই জয় করার পরে এ বার তাঁর লক্ষ্য রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনই ঘরে তোলা। ছড়া গেঁথে মমতা বলেছেন, ‘‘একুশে দিচ্ছি ডাক/ ৪২-এ ৪২ থাক/ সিপিএম ধাক্কা খাক/ বিজেপি গোল্লায় যাক!’’
সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান, কংগ্রেসের চার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়, আবু তাহের খান, সাবিনা ইয়াসমিন ও আখরুজ্জামান এ দিন ২১শের সমাবেশ মঞ্চে এসেছিলেন। মমতা তাঁদের স্বাগত জানান। সেই ঘটনা সামনে রেখেই প্রদেশ কংগ্রেস কিন্তু তৃণমূলের নীতি নিয়েই প্রশ্ন তুলছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, ‘‘উনি নিজেই পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ধ্বংস করছেন। বাম, কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে ভাঙাচ্ছেন। আবার বলছেন, বিরোধী ঐক্য হবে!’’ বাংলায় তাঁরা তৃণমূল-বিরোধিতার পথেই থাকবেন বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীরবাবু।
লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে ভোটাভুটিতে শুক্রবারই ৩২৫ জন সাংসদের সমর্থন পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কিন্তু মমতা এ দিন দাবি করেছেন, ওই হিসেব ২০১৪ সালের। সব হিসেব ২০১৯-এ উল্টে যাবে। ‘‘উত্তরপ্রদেশে বিজেপির আসন প্রায় ৫০টা কমবে, মধ্যপ্রদেশে ২৮টার মধ্যে তারা গোটাসাতেক পাবে, রাজস্থানে তাদের ৫-৬টি আসন জুটবে, বিহারে লালুপ্রসাদ ওদের খেয়ে নেবেন, পঞ্জাবে অমরিন্দর সিংহ খেয়ে নেবেন’’— এ ভাবেই রাজ্য ধরে ধরে মমতা দাবি করেছেন, কী ভাবে গেরুয়া শিবিরের পতন হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ৩২৫ কমে ১০০ হবে। বড় জোর ১৫০! আর বাংলা দেশকে পথ দেখাবে। তাই ৪২-এ ৪২ চাই।’’