প্রতীকী ছবি।
সরকারি কর্মীদের মতো কর্মস্থল বদলের সূত্রে শিক্ষকদেরও প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিএফের ঠাঁইবদল হওয়াটাই দস্তুর। অথচ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ে অদ্ভুত জট-জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাচ্ছে শিক্ষক শিবির। দেখা যাচ্ছে, অনেক আবেদন-নিবেদন, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে নতুন স্কুলে বদলি হয়ে অনেকেই বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তাঁদের পিএফ নতুন স্কুলে বদলি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন বেশ কিছু শিক্ষক।
তাঁদের অভিযোগ, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা দফতর, যে-স্কুল থেকে শিক্ষক বা শিক্ষিকা বদলি হয়েছেন, সেখানকার প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং জেলা স্কুল পরিদর্শককে বার বার বলেও কাজ হচ্ছে না। আবার অনলাইনে কিছু শিক্ষকের পিএফ বদলি যথাসময়ে মসৃণ ভাবে হয়ে যাচ্ছে। একই পেশায় পিএফ বদলি নিয়ে এমন সমস্যা কেন, কেন সরকারি কর্মীদের মতো নেট-মাধ্যমে সব শিক্ষকের পিএফ বদলি হচ্ছে না, জোরদার হচ্ছে সেই প্রশ্ন।
শিক্ষকেরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী যখন কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা নতুন স্কুলে বদলি হন, তখন তাঁর পিএফ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র জেলা স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে নতুন স্কুলের অ্যাকাউন্টে বদলির জন্য পুরনো স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন করতে হয়। যাতে নতুন স্কুল সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের পিএফ গণনার কাজ শুরু করতে পারে। অভিযোগ, এই কাজ অনেক ক্ষেত্রেই সময়মতো হচ্ছে না।
পাঁচ বছর আগে মালদহের একটি স্কুল থেকে বদলি নিয়ে মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে গিয়েছেন সাহেব মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমার পিএফ এখনও নতুন স্কুলে বদলি হয়নি। আমি শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী। বার বার আমার পুরনো স্কুলে বা জেলার শিক্ষা দফতরে গিয়ে তাগাদাও দিতে পারি না।’’ শিক্ষিকা তানিয়া কর পুরনো স্কুল থেকে নতুন স্কুলে আসার পরে কেটে গিয়েছে আট বছর। এখনও তাঁর নতুন স্কুলে পিএফ বদলি হয়নি।
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, তাঁদের পিএফ নতুন স্কুলে বদলি না-হওয়ায় অনেকেই পিএফ থেকে ঋণ নিতে পারছেন না। শুধু শিক্ষক নন, এই সমস্যায় পড়েছেন অনেক শিক্ষাকর্মীও। শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘আমরা শিক্ষকদের পিএফ ট্রান্সফারের পুরনো পদ্ধতির অবসান চাই। অনলাইনে সরকারি কর্মচারীদের যেমন দ্রুত পিএফ ট্রান্সফার করা হয়, সেই ব্যবস্থা করা হোক স্কুলশিক্ষকদের ক্ষেত্রেও।’’ কিঙ্করবাবু জানান, বেশ কয়েকটি জেলায় বদলির ছ’মাস পরেও পিএফের সুদ দেওয়া হচ্ছে না বলে কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন। এর সুরাহায় তাঁরা শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
বদলি হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ আবার জানাচ্ছেন, নতুন স্কুলে বদলি হওয়ার পরে তাঁদের পিএফ বদলের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হয়নি। অনলাইনেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, “কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার পিএফ বদলি অনলাইনে হলেও সকলে সেই সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সমস্যাটির দ্রুত সমাধান দরকার।’’