‘অনেকেই বলেন, আমায় নাকি দেখতে কবিগুরুর মতো’

হেসে বললেন, ‘‘আমি এক জন রবীন্দ্রভক্ত। নাম সোমনাথ ভদ্র। অনেকেই বলেন, আমায় নাকি দেখতে কবিগুরুর মতো।’’

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৭
Share:

রবিচ্ছায়া: হেদুয়ায় সোমনাথ ভদ্র। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

‘একটা বড় চা দিন তো’-কথাটা বলে উল্টো দিকের বেঞ্চে বসা ব্যক্তির দিকে তাকাতেই বিস্মিত কলেজ পড়ুয়া যুবক।

Advertisement

জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির সামনে, ২২ শ্রাবণের সকালে এ কাকে দেখছেন তিনি! মাথায় ঢেউ খেলানো কাঁচা-পাকা চুল। সঙ্গে লম্বা দাড়ি। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ওই ব্যক্তি যে অবিকল কবিগুরু! ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রহস্যের উন্মোচন করলেন ‘কবিগুরু’ নিজেই। হেসে বললেন, ‘‘আমি এক জন রবীন্দ্রভক্ত। নাম সোমনাথ ভদ্র। অনেকেই বলেন, আমায় নাকি দেখতে কবিগুরুর মতো।’’

শুধু ওই পড়ুয়াই নন, রাস্তায়, ট্রামে-বাসে, ট্রেনে যে কেউই হেদুয়ার দীনবন্ধু চক্রবর্তী লেনের বাসিন্দা সোমনাথবাবুকে দেখলে প্রথমে বিস্মিত হন। বিএসএনএল-এর কর্মী, বছর আটান্নর ওই ব্যক্তি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি কখনই কবিগুরুকে নকল করতে চাইনি। তবে ছোট থেকেই ওঁর চেহারার সঙ্গে মিল রয়েছে। আর বড় হওয়ার পরে চুল-দাড়িও ওঁর মতোই হল।’’ তাঁর দাবি, আগে চুল-দাড়ি কেটে ফেলতেন। কিন্তু বছর চারেক আগে পরিচিতরা তাঁকে ঢেউ খেলানো চুল ও লম্বা দাড়ি রাখতে বলেন। এর পর থেকেই ‘রবীন্দ্রনাথ লুক’-এ শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান সোমনাথবাবু।

Advertisement

দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। সোমনাথবাবু জানান, রবি ঠাকুরের সব বই যে পড়েছেন, তেমনটা নয়। তবে রবি ঠাকুরের গান বড্ড ভালোবাসেন তিনি। আগে শুনতেন রেডিয়োয়। এখন মোবাইলে ভরে রেখেছেন প্রিয় গানগুলি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেহারার সঙ্গে এত মিল রয়েছে বলে অনেক জায়গায় বাড়তি সুবিধাও পেয়েছেন বলে জানালেন সোমনাথ। বললেন, ‘‘সবাই দেখলেই ছবি, নিজস্বী তোলেন। স্থানীয় কিছু সমস্যার জন্য গঙ্গাসাগরে একটা কাজ আটকে ছিল। আমি যেতেই স্থানীয়েরা নিজেরাই এসে সাহায্য করলে‌ন।’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে অফিস সোমনাথবাবুর। তবে বছরের দু’টি দিন তিনি অফিসমুখো হন না। বললেন, ‘‘চাকরি গেলে যাক। ২৫ বৈশাখ আর ২২ শ্রাবণ আমি অফিস যাই না। ওই দিনগুলো তো কবিগুরুর জন্য।’’ সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘এ কোন রবি’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি।

চেহারায় মিল থাকার জন্যই কি এত কিছু?

‘‘না, একদম ভুল কথা। ছোট থেকেই আমি রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসি। ওঁর গান আমায় চুম্বকের মতো টানে’’ বললেন সোমনাথবাবু। ছোট থেকে কোথাও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর বসলেই ছুটে যান তিনি। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে ডায়েরি বের করে নিয়ে নেন শিল্পীর সই। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, দেবব্রত বিশ্বাস— কে নেই সেই তালিকায়! দীর্ঘদিন ধরেই রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির সদস্য সোমনাথবাবু। সেখানে তাঁকে মজা করে ডাকা হয় ‘কালো রবীন্দ্রনাথ’ বলে। তাতে অবশ্য বিন্দুমাত্র রাগ নেই তাঁর। বললেন, ‘‘রাগব কেন! আমার গায়ের রং তো কালোই।’’

প্রতি বুধবার বিকেলে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির ঘরোয়া আড্ডায় হাজির হ‌ন সোমনাথ। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সোসাইটির এমন কোনও অনুষ্ঠান নেই যে সেখানে উনি আসেননি। আগে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আমি এখন ওঁকে প্রকাশ্যে এনেছি। কাকতালীয় ভাবে ওঁর চেহারাটা কবিগুরুর সঙ্গে মিলে যায়।’’ সিদ্ধার্থবাবু জানান, অত্যন্ত মিশুকে স্বভাবের সোমনাথবাবুকে দেখতে পেলেই তাঁকে ক্যামেরা-বন্দি করেন জোড়াসাঁকোয় আসা বিদেশিরা।

হেদুয়ার লোকজনও এখন সোমনাথবাবুর আসল নামটা প্রায় ভুলতে বসেছেন। তা নিয়ে অবশ্য তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। হেদুয়ার ‘রবীন্দ্রনাথ’ নিজের মনেই গুনগুন করতে থাকেন, ‘আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি...’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement