শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
চাকরি বাতিলের ঘটনায় শনিবারও রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন বিরোধী দলের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত রইল। রাজ্য সরকারকে নিশানা করার পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, পুড়িয়ে ফেলা কিছু উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরের অধীনে থাকা সিবিআই এবং কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্যই পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে। যদিও পাল্টা উত্তরপত্র পুনরুদ্ধার নিয়েই প্রশ্ন তুলে চাকরি বাতিলের ঘটনায় চক্রান্তের তত্ত্বে শাণ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
নদিয়ার রানাঘাটে এ দিন রামনবমীর একটি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। তাঁর সঙ্গে যোগ্য চাকরিহারাদের ৩০ জনের একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে। বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার শিক্ষক সেলের তরফে শুভেন্দুকে প্রায় আড়াইশো জন যোগ্য চাকরিহারাদের নামের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। রানাঘাট থেকেই শুভেন্দু উত্তরপত্র কারচুপির অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। বিরোধী দলনেতা বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে থাকা সিবিআই ও প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই ওএমআর শিট পুনরুদ্ধার করা গিয়েছিল। তাই তা হাতে নিয়ে আপনারা (যোগ্য চাকরিহারা) নিজেদের যোগ্য বলতে পারছেন। উত্তরপত্রটা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়!” যোগ্য-সহ ২০১৬-য় মোট ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন শুভেন্দু।
এই প্রেক্ষিতেই চক্রান্তের তত্ত্ব উস্কে দিচ্ছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “উত্তরপ্রদেশের এক জনের বাড়ির ছাদ থেকে ওএমআর উদ্ধার হয়েছে। এটা কারচুপি কি না, তার তদন্ত হওয়া দরকার। ৪০৯১ জনের ওএমআর জালিয়াতি হয়েছে বলা হচ্ছে। তা হলে ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি খেয়ে ভোটের আগে বাংলায় অস্থিরতা তৈরির কোনও চক্রান্ত হচ্ছে না তো?” চাকরিহারা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কয়েক জন এ দিন কুণালের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং যোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের ঝাঁজ এ দিন আরও বাড়িয়েছে সিপিএম। দলের ছাত্র-যুবরা বারাসত, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে মিছিল করেছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ক্ষমতায় এলে যোগ্যদের নিয়ে আদালতে যাওয়ার যে কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেছেন, তাকেও কটাক্ষ করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “বিরোধী দলনেতা যোগ্যদের তালিকা নিয়ে আদালতে যাওয়ার কথা বলছেন। তা হলে অবশ্যই আপনার কাছে অযোগ্যদের তালিকাও আছে। সেটা আদালতে দেননি কেন?”
যোগ্যদের চাকরি বহালের দাবি নিয়ে কলেজ স্ট্রিটে মিছিল করেছে আইএনটিইউসি সেবা দল। সেই সঙ্গে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর তোপ, “মুখ্যমন্ত্রী সুকৌশলে তাঁর লোকজনকে দিয়ে প্রচার চালানোর চেষ্টা করছেন যে, বিচারপতিদের জন্যই চাকরি গেল। বলছেন না, সরকারের দুর্নীতির জন্যই এই হাল। প্রহ্লাদ আর জহ্লাদ এক করবেন না!”
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-ও ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।