শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
গরমের মধ্যে লাগাতার বিদ্যুৎবিভ্রাটে নাজেহাল অবস্থা রাজ্যবাসীর। লোডশেডিং নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে এ বার আক্রমণ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। স্লোগান তুললেন, ‘‘লোডশেডিংয়ের সরকার, আর নেই দরকার।’’ গত কয়েক দিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গরমের মধ্যে বিদ্যুৎবিভ্রাটের অভিযোগ করেছেন রাজ্যবাসীর একাংশ। গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের সমস্যা নিয়ে সোমবার রাজ্যের এক দফতর থেকে অন্য দফতরে ছুটলেন শুভেন্দু। প্রথমে বিদ্যুৎ ভবনে যান বিরোধী দলনেতা। সেখান থেকে শুভেন্দুকে ‘উৎপাদন’ বিভাগে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই মতো রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের দফতরে যান শুভেন্দু। সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদামাধ্যমের কাছে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘লোডশেডিং বন্ধ করতে সমাধান চেয়ে কথা বলতে এসেছিলাম। কিন্তু কথা বলতে চাননি কেউ। সিএমডি বাথরুমে ঢুকে গিয়েছেন। এর থেকে লজ্জার কিছু হয় না।’’ একই সঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আগামী দিনে জনগণ এবং বিদ্যুৎ গ্রাহকরা রাস্তায় নামবেন।’’ এর পাল্টা সরব তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপি নেতাদের মুখে এ সব কথা মানায় না। পঞ্চায়েত ভোটের আবহে গ্রাম-বাংলার মানুষের লোডশেডিংয়ের সমস্যাকেও বিজেপি যে হাতিয়ার করতে চাইছে, তা স্পষ্ট করে দিলেন শুভেন্দু।
কলকাতা-সহ শহরতলির যে সব এলাকায় সিইএসসি-র পরিষেবা রয়েছে, সেখানেও দুর্ভোগের ছবি ধরা পড়েছে। তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের দাপটে সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। অনেকেই অভিযোগ করছেন, রাতে ২-৩ ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। আবার দিনের বেলাতেও দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বিদ্যুৎহীন থাকছে। গ্রামের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠেছে। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে বিদ্যুতের মতো জরুরি পরিষেবাকে নিয়ে এ বার তৃণমূলকে বিঁধলেন শুভেন্দু।
বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সারা দিনে ৩ থেকে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা তথ্য দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটাও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে পারেননি। উল্টে কোলাঘাট, ব্যান্ডেলে বন্ধ করেছেন।’’ এর পর, গত কয়েক দিন ধরে ধরে বিদ্যুতের ঘাটতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘এই ঘাটতি মেটাতে লোডশেডিং করে বাংলার মানুষকে গরমে কষ্টে রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন।’’
শুভেন্দুর পাল্টা মুখ খুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেব। তিনি বলেছেন, ‘‘২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর মানুষ ভুলে গিয়েছে যে, লোডশেডিং কী জিনিস। রাজ্যের নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়নি বা কোলাঘাটে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এটা বিজেপি নেতাদের না ভাবলেও চলবে। তাঁরা বরং দেশের রেল পরিষেবার উন্নয়নে বেশি করে মন দিন। রেলে এখনও সিগন্যাল ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি’’ করমণ্ডল দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেছেন, ‘‘গত ৯ বছরে কী করেছে বিজেপি সরকার? এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে গেল। কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। তাই তাঁদের নেতাদের মুখে এমন অভিযোগ মানায় না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলায় বিদ্যুৎ পরিষেবা ভাল রয়েছে বলেও দাবি করেছেন বিশ্বজিৎ।
লোডশেডিংয়ের সমস্যা নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনকে সিইএসসির এগ্জ়িগিউটিভ ডিরেক্টর অভিজিৎ ঘোষ সম্প্রতি জানান তাঁদের এলাকায় বিদ্যুতের কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু এত মানুষ না জানিয়ে এসি লাগাচ্ছেন যে, সিইএসসির কাছে অনেক এলাকার লোড সম্পর্কে আগাম ধারণা নেই। সেই কারণেই সমস্যা হচ্ছে।