মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
রেশন-দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের দাবি তুলে চাপ বাড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছে, কাচের ঘরে বসে ঢিল ছোড়া উচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান শুনতে গিয়ে রবিবার নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আমাদের তিনটি মৌলিক অধিকার। তিনটি জিনিসের চাহিদা। কী প্রয়োজন? খাদ্য। খাদ্যমন্ত্রী জেলে! আর কী প্রয়োজন? শিক্ষা। শিক্ষামন্ত্রী তো আগেই জেলে! বাকি থাকল স্বাস্থ্য। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখতে চায়, কবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেলে যাবেন?” প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতেই রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই যাবতীয় দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা।
শাসক দল তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা মন্তব্য করেছেন, ‘‘প্রথমত, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের এখন ‘হারাধন’ বলতে হবে। দিলীপ ঘোষ এই নাম ঠিক করে দিয়েছেন। তার পরে প্রশ্ন, শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ রাখাল বেরা গ্রেফতার হওয়ার পরে কি বিরোধী দলনেতা গ্রেফতার হয়েছেন? তা হলে রেশনের ক্ষেত্রে এক ব্যবসায়ী ধরা পড়ায় অন্য মন্ত্রীদের গ্রেফতারের কথা আসছে কেন? এ সব প্রলাপ!’’
শুভেন্দু এ দিন আরও দাবি করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই সব দুর্নীতি হয়েছে। মমতা এবং তার দল একটা বড় অংশের টাকা তুলেছে গরিবের চাল, আটা, গম আর ধান কেনার টাকা মেরে। এত নিম্ন মানের কাজ ভারতবর্ষের কোথাও হয়নি।’’ জ্যোতিপ্রিয় ও তাঁর সহায়কদের ব্যবহার করা ২৫টা ফোনের নানা তথ্য তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ইডি সূত্রের খবর। সেই প্রেক্ষিতেই শুভেন্দুর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় ধারাবাহিক যোগাযোগ রেখে চলতেন এবং সব বিষয়ই মুখ্যমন্ত্রী জানতেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, “জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সব সময় যে ফোন ব্যবহার করতেন, তার একটা হচ্ছে সহায়কের। আর দুই হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের। ওঁর পদবি রাও। তাঁর মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতেন জ্যোতিপ্রিয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থার কাছে অনুরোধ করব, যদি ২৫টা মোবাইলের মধ্যে এই দুটো ফোন না থাকে, তা হলে এই দু’টো ফোন থেকেও হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট এবং বিশদ তথ্য বার করতে পারেন, তা হলে দেখবেন কত বার সারা দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কথা বলতেন।”
তৃণমূলের কুণালের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আগে উনি (শুভেন্দু) বলুন, সুদীপ্ত সেনকে কাঁথিতে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাইয়েছিলেন কি না? বলুন, উনি আর ওঁর ভাই মিলে পাড়ায় ঢুকে সুদীপ্ত সেনকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা তুলেছেন কি না? আগে উনি বলুন, কাঁথি পুরসভায় সারদার টাকা ঢুকেছে কি না? উনি শুধু প্রলাপ বকছেন!’’
প্রসঙ্গত, দলের ‘আমার মাটি, আমার দেশ’ কর্মসূচি উপলক্ষে এ দিন বাংলার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য স্থান থেকে জোগাড় করা মাটি নিয়ে কলেজ স্কোয়ার থেকে ওয়াই চ্যানেল পর্যন্ত মিছিল করেছে বিজেপি। মিছিলের সামনের সারিতে একসঙ্গে হাঁটতে দেখা গিয়েছে বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত ও প্রাক্তন দুই রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও রাহুল সিংহকে। এলাকা ধরে ধরে বিজয়া সম্মিলনীর পরে রেশন-দুর্নীতি নিয়ে তাঁরা প্রয়োজনে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেবেন বলে সুকান্ত জানিয়েছেন। শহরে এ দিনই বিভিন্ন রেশন দোকানের সামনে বিক্ষোভ করেছে কলকাতা জেলা সিপিএম। মির্জা গালিব স্ট্রিটে খাদ্য দফতরের সামনে সিপিএম আজ, সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসও।