কিছু বর্তমান ও প্রাক্তন জনপ্রতিনিধির ভূমিকায় নজর দেওয়ার দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের আরও কিছু বর্তমান ও প্রাক্তন জনপ্রতিনিধির ভূমিকায় নজর দেওয়ার দাবি তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সমাজমাধ্যমে সোমবার শাসক দলের বর্তমান ও প্রাক্তন মিলিয়ে ৬ জন সাংসদ ও বিধায়কের নাম করে শুভেন্দু তাঁদের কয়েক জনের লেখা কয়েকটি চিঠি পোস্ট করেছেন। কিছু ব্যক্তির নাম দিয়ে চাকরির সুপারিশ রয়েছে ওই চিঠিগুলিতে। তৃণমূল অবশ্য পাল্টা বলেছে, সারদা ও নারদ-কাণ্ডে অভিযুক্ত শুভেন্দুকেই আগে গ্রেফতার করা উচিত। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট সাংসদ-বিধায়কেরাও।
সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টে শুভেন্দু লিখেছেন, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার ভূমিকা তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। তাঁর দাবি, দুর্নীতির চক্রের শিকড় পর্যন্ত পৌঁছনোর লক্ষ্যে আরও কিছু নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কের ভূমিকার দিকে নজর দেওয়া উচিত। বিরোধী দলনেতার পোস্ট করা চাকরির সুপারিশের তালিকা সূত্রে নাম রয়েছে সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, আবু তাহের খান, মন্ত্রী অখিল গিরি এবং বিধায়ক নিশীথ মালিকের। নাম করা হয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন দুই বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় ও অসীম মাঝিরও। পরে বাঁকুড়ার ওন্দায় এ দিনই বিজেপির জনসভা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা আরও বলেছেন, ‘‘একটা তালিকা প্রকাশ করেছি যেখানে দু’জন সাংসদ, এক জন মন্ত্রী, কয়েক জন প্রাক্তন বিধায়ক আছে। এই তালিকা ক্রমশ লম্বা হবে, তৃণমূল আরও ছোট হবে, তিহাড় বা প্রসিডেন্সি জেলে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে!’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রশ্ন, গ্রেফতার না হয়ে শুভেন্দু ঘুরে বেড়াচ্ছেন কী ভাবে? নারদ-কাণ্ডে এফআইআরে ওঁর নাম আছে, তদন্ত থেকে বাঁচতে বিজেপিতে গিয়েছেন। এখন সিবিআই একমুখী তৎপরতা দেখাচ্ছে। সিবিআইয়ের উচিত সারদা ও নারদ মামলায় শুভেন্দুকে গ্রেফতার করা।’’
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সাংসদেরাও। মন্ত্রী অখিলের বক্তব্য, ‘‘বিরোধী দলনেতা কিছু বলতেই পারেন। চাইলে যে কেউ তদন্তও করতে পারে। সেই তদন্তে আমি সহযোগিতা করব। তবে বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে যে কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে, তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’
আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলি পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘গত ২৯ মার্চ দিল্লি থেকে ফেরার সময়ে কলকাতা বিমানবন্দরে দিব্যেন্দু অধিকারীর (শুভেন্দুর ভাই) সঙ্গে দেখা হয়। দিব্যেন্দু আমাকে বলেন, বিজেপিতে না গেলে তৃণমূলের কিছু বিধায়ক, সাংসদের মতো আমিও নাকি ফেঁসে যাব! সেই কথা মনে পড়ে গেল। আপনি (শুভেন্দু) এবং আপনার সাংসদ-ভাই দিব্যেন্দু কবে সিবিআইয়ের কাছে এই চিঠি নিয়ে যাবেন? আমরা তিন জনেই এক সঙ্গে যাব।’’ রাতে অবশ্য টুইট করে শুভেন্দুকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে অপরূপার আক্রমণ, ‘‘দম থাকলে টুইট করা কাগজ মিডিয়ার সামনে নিয়ে আয়, আমায় আউট করে দেখা!’’ বিধায়ক নিশীথ দাবি করেছেন, ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছেন বিরোধী দলনেতা। তার জবাব দেওয়ার দরকার পড়ে না। প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশুরও দাবি, তাঁর হাতে লেখা কোনও চিঠি বিরোধী দলনেতা দেখাতে পারেননি। আর হুগলির বলাগড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অসীমের বক্তব্য, ‘‘আগে যা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার, দিয়েছি। নতুন করে কোনও মন্তব্য করব না।’’
পাশাপাশি, শুভেন্দুর অভিযোগ কালীঘাটের পটুয়াপাড়া থেকে রবিবার সন্ধ্যায় একটি বাসকে পুলিশ পাহারায় ঢুকতে ও বেরোতে দেখা গিয়েছে। মহারাষ্ট্রের নম্বর প্লেটের ওই বাসকে কেন পুলিশি নিরাপত্তা দিতে হল, কারও দফতর থেকে এসএসসি বা কয়লা কেলেঙ্কারির নথিপত্র বা টাকা-পয়সা সরিয়ে নেওয়া হল কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা। লালবাজারের কর্তারা এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূলের কুণালের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘এ বার যদি শান্তিকুঞ্জ কিংবা কাঁথি দিয়ে কোনও ভিন্ রাজ্যের বাস যায়, সেই ছবি তুলে যদি কেউ পোস্ট করে, সেটা যুক্তিগ্রাহ্য হবে? গোয়েবল্স-এর কায়দায় সব কিছু নিয়ে পরিকল্পিত কুৎসা চলছে আর যিনি কুৎসা করছেন, তাঁর এত দিনে জেলে থাকার কথা ছিল!’’