Mamata - SSC Job Loss Victims Meeting

যোগ্যদের তালিকা-সহ আপনি সুপ্রিম কোর্টে যান, মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ শুভেন্দুর! যাহাই পার্থ তাহাই মমতা, খোঁচা সেলিমের

যোগ্যদের কারও চাকরি যাবে না বলে নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে তাঁকে একযোগে আক্রমণ করলেন বিরোধীরা।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:২৮
Share:
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারী, মহম্মদ সেলিমদের।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারী, মহম্মদ সেলিমদের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

যোগ্যদের কারও চাকরি যাবে না বলে নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে তাঁকে একযোগে আক্রমণ করলেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, চাকরিহারাদের এই পরিস্থিতির জন্য তিনি এবং তাঁর সরকারই দায়ী। টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া, ওএমআর শিট নষ্ট তাঁর সরকারই করেছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, কে যোগ্য, কে অযোগ্য, তা রাজ্য সরকার জানে। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর কটাক্ষপূর্ণ পরামর্শ, ‘‘আপনিই সেই তালিকা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যান। আপনি তো আইনজীবী বলেন নিজেকে। তা হলে আপনিই যোগ্যদের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করুন।’’ মমতাকে বিঁধেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী এখন ‘সাধু’ সাজার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করেছে সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে চাকরি চলে গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার জনের। চাকরিহারাদের একাংশের প্রশ্ন, কেন যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করে এই রায় দেওয়া হল না? কেন অযোগ্যদের জন্য যোগ্যদের চাকরি চলে গেল? সেই বিতর্কের আবহেই সোমবার চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে নেতাজি ইন্ডোরে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তাঁদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, যোগ্য কারও চাকরি যাবে না। তাঁর সরকার আবার সুপ্রিম কোর্টে যাবে। রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাবে। ঘটনাচক্রে, নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শেষ হওয়ার কিছু ক্ষণ পরেই জানা গেল, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। তাদের আর্জি, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত চাকরি থাক যোগ্যদের।

কিন্তু নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের যে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাকে কোনও রকম আশ্বাস বলে মানতেই নারাজ শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজ যদি যোগ্যদের বাছাই করে পাস দেওয়া সম্ভব হয়, তা হলে সেই তালিকা সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া হল না কেন? মুখ্যমন্ত্রী আসলে নাটক করছেন। চাকরি বিক্রি করে ওঁর দল এবং ওঁর ভাইপো যে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছেন, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের রেকর্ডিংয়ে ৭৩ বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছে। সিবিআই চার্জশিটেও তা রয়েছে।’’

Advertisement

শুভেন্দুর দাবি, ২০২২ সালে কলকাতা হাই কোর্টের তদানীন্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (বর্তমানে যিনি বিজেপির সাংসদ) পাঁচ হাজারের বেশি ‘অযোগ্যের’ চাকরি বাতিল করেছিলেন। রাজ্য সরকার যদি সেই রায় মেনে নিয়ে ‘২০০ কোটি টাকা খরচ করে’ সুপ্রিম কোর্টে না যেত, তা হলে যোগ্যদের এই দিন দেখতে হত না। বিরোধী দলনেতার হুঁশিয়ারি, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে রাজ‍্য সরকার যোগ‍্যদের তালিকা সুপ্রিম কোর্টে জমা না দিলে পতাকা ছাড়া বিজেপি বিধায়কেরা যোগ‍্য শিক্ষকদের সমর্থনে নবান্ন অভিযান করবে। চাকরিহারাদের আইনি সাহায্যেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শুভেন্দু। বলেছেন, ‘‘আদালতে আপনারা লড়াই করুন। আইনজীবীর খরচ বিজেপি পরিষদীয় দলের তরফে দেওয়া হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন সেলিমও। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেছেন, উনি কিছু জানতেন না। এ দিকে, এই মুখ্যমন্ত্রী সব জেলায় প্রশাসনিক সভায় বলতেন, সব খবর তাঁর কাছে সরাসরি আসে। ওঁর দলের মুখপাত্রও তো বলেছেন, দলের কাছে খবর ছিল টাকা তোলা হয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোরের সভায় বলেছেন, ‘‘কেউ যদি ভুল করে, তার দায়িত্ব আমরা কেন নেব। যে মানুষটা জানেই না কী হয়েছে... আমার নামে কুৎসা করছে। জেনেশুনে আমি কারও চাকরি খাই না। অনেক বদহজম সত্ত্বেও সিপিএমের কারও চাকরি খাইনি। কারণ আমি বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই।’’

কিন্তু সিপিএমের বক্তব্য, এর দায় মুখ্যমন্ত্রী এড়িয়ে যেতে পারেন না। সেলিমের যুক্তি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীই বলতেন ২৯৪ কেন্দ্রে উনিই প্রার্থী। অতএব বেহালা পশ্চিমে উনিই প্রার্থী ছিলেন। অতএব যাহা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তাহাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ জানি না বলে সাধু সাজলে হবে না।’’

কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ও বলেন, ‘‘আমরা চাই যোগ্যরা চাকরি পান। স্থিতাবস্থা বজায় থাক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী আজ যা বললেন, তাতে উনি সব কিছু গুলিয়ে দিতে চাইছেন। যোগ্য-অযোগ্য সব মিলিয়ে দিতে চাইছেন। উনি যোগ্যদের চাকরি দেওয়ার কথা বলছেন, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বলছেন অযোগ্যদেরও চাকরি দেব। তার মানে কি উনি দুর্নীতিকে আরও প্রশ্রয় দিতে চাইছেন? এ ভাবে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতা করছেন।’’

যদিও অযোগ্যদের চাকরি দেওয়ার কথা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী বলেননি। নেতাজি ইন্ডোরে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘আগে যোগ্যদেরটা দেখতে দিন। তার পর আবার ডাকব। কেন বাকিদের অযোগ্য বলা হচ্ছে, কী কারণে বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকার খতিয়ে দেখবে।’’

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement