ফাইল চিত্র।
শিক্ষা এবং দমকলের পরে এ বার নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠল বিধানসভায়। ভুয়ো মার্কশিট দাখিল করে বিধানসভায় অনেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অভিযোগ নস্যাৎ করে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, নিয়ম মেনেই যা নিয়োগ হওয়ার, হয়েছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রশ্ন, গত বছর পর্যন্তও রাজ্য সরকারের অংশ ছিলেন শুভেন্দু। আগে কেন এমন অভিযোগ তাঁর মুখে শোনা যায়নি?
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার বিধানসভায় এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু গ্রুপ ডি নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘২০১১ সাল থেকে বিধানসভার নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে। আমাদের হাতে কিছু প্রমাণ রয়েছে। মূলত গ্রুপ ডি পদে নিয়োগে ক্ষেত্রে এই দুর্নীতি হয়েছে।’’ অভিযোগের পক্ষে কিছু তথ্য-প্রমাণ খুব শীঘ্রই প্রকাশ্যে আনা হবে বলে জানিয়ে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ‘‘বিধানসভায় যাঁরা গ্রুপ ডি পদে বহাল হয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে, এমন বহু লোক বিধানসভায় বহাল হয়েছেন, যাঁরা ভুয়ো মার্কশিট দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। অষ্টম ও দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ যাঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগেরই ভুয়ো বা জাল মার্কশিট দিয়ে চাকরি হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগেরই মার্কশিট বাইরের রাজ্য থেকে আনা হয়েছে।’’
সূত্রের খবর, বিধানসভায় ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের নাম-ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, স্কুল-কলেজের নাম সংক্রান্ত তথ্য জানতে চেয়ে তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) আবেদন করা হয়েছিল বিরোধী দলনেতার তরফে। কিন্তু আরটিআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঠিক পদ্ধতি মেনে আবেদন করা হয়নি। এই বিষয়ে ফের তারা পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রে খবর। প্রয়োজনে যাওয়া হতে পারে আদালতেও।
বিরোধী দলনেতার এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলেই মন্তব্য করেছেন স্পিকার বিমানবাবু। তিনি বলেন, ‘‘একেবারে ভিত্তিহীন অভিযোগ! বিধানসভায় যে নিয়োগের কথা তিনি বলেছেন, তার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ কোথায়? তা ছাড়া, বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাঁর নিজের দফতরেও ওই একই পদে নিয়োগ হয়েছে।’’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘২০২১ সাল পর্যন্ত এই সরকার ও দলে তিনিও ছিলেন। তখন একটি কথাও বলেননি! এখন অর্থহীন কথা বলছেন।’’ রাজভবনে কী ভাবে লোক নিয়োগ হয়েছে, সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেও বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষ করেছে শাসক শিবির। প্রসঙ্গত, নিয়োগ-সংঘাতের মধ্যেই বিধানসভার আর এক বিতর্কিত অধ্যায় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠকে এ দিন নতুন চেয়ারম্যান কৃষ্ণ কল্যাণী গরহাজির ছিলেন।
এই প্রসঙ্গে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘আরটিআই করে কী জানা যাবে, জানি না। এ রাজ্যে আরটিআই করে ইদানীং উত্তর মেলে না। তবে বর্তমান বিরোধী দলনেতা রাজ্যের মন্ত্রী থাকাকালীন পরিবহণ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ভাবে নিয়োগ হয়েছে, তার তথ্য আমাদের কাছেও আছে!’’ এই সূত্রেই রাজ্যের একটি পঞ্চায়েতে তথ্যের অধিকার আইনে আবেদনকারী এক ব্যক্তির কাছে ফোটোকপি করার খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা চেয়ে পাঠানোর তথ্যও এ দিন তুলে ধরেছেন সেলিম!