আইপিএস গৌরব দত্তের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে গত মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত।
মুখ্যমন্ত্রী থেকে আইপিএস মহল—তাঁর অভিযোগ সকলের বিরুদ্ধে। তাঁর মতে, সবাই তাঁর প্রতি ‘অবিচার’ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বাম আমলে শুরু হওয়া বিভাগীয় তদন্ত বর্তমান সরকারের আট বছরেও শেষ হয়নি। সেই অভিযোগকারী আইপিএস গৌরব দত্তের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে গত মঙ্গলবার। আইজি হিসাবে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছিল ৩১ জানুয়ারি।
মৃত্যুর পরেই গৌরবের লেখা পুরনো একটি অভিযোগপত্র ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। যা তিনি নিজেই মৃত্যুর আগে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় পাঠিয়েছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। ওই অভিযোগ পত্রে তিনি জানিয়েছেন, গত দশ বছর ধরে তাঁর পদোন্নতি, কেন্দ্রীয় সরকারে যোগ দেওয়া, মিড কেরিয়ার প্রশিক্ষণে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এমনকি, ছুটি পর্যন্ত মেলেনি। অবসরের পরেও তাঁর গ্র্যাচুইটি, ‘কমিটেড ডিউ’ এবং লিভ স্যালারির ৭২ লক্ষ টাকাও আটকে রাখা হয়েছে।
যদিও নবান্নের দাবি, তাঁর ‘প্রভিশনাল পেনশন’ চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিভাগীয় তদন্ত বাকি থাকলে অন্য পাওনা-গণ্ডা মেটানো হয় না। এটাই সরকারি রীতি। গৌরবের বিরুদ্ধে তাঁর ‘নৈতিক চরিত্র’ নিয়ে অভিযোগের তদন্ত চলছিল। সর্বভারতীয় সার্ভিসের অফিসারদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু গৌরবের বিরুদ্ধে ওঠা তদন্তে সময় বেশি লাগার সুবাদে পদোন্নতি না পেলেও তিনি পুরো মেয়াদ চাকরি করেছেন।
তবু তদন্ত কেন এত বিলম্বিত, সেই প্রশ্নও উঠেছে। গৌরবের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, যদি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে সরকার কোনও ব্যবস্থা নিত, তা হলে অন্তত উচ্চ আদালতে গিয়ে তিনি তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নিতে পারতেন। কিন্তু তদন্ত ১০ বছরেও শেষ না হওয়ায় তিনি সেই সুযোগ পেলেন না।
আইপিএসের চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই বিতর্ক গৌরবের সঙ্গী। কেশপুরের গোলমালের সময় তিনি ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার। বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন। তখনই তাঁর নৈতিক চরিত্র নিয়েও তৎকালীন রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে অভিযোগ করেন এক পুলিশ কর্মীর স্ত্রী। বামফ্রন্ট সরকার তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছিল। পরে যেখানে সিপিএমের রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে, সেখানে গৌরবকে বসানো হয়েছে। গৌরবের চিঠিতেও বাম নেতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা বার বার লেখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পিএইচডি-র বিষয় ছিলেন বিনয় চৌধুরী। প্রয়াত সিপিএম নেতা বিনয়বাবু বাম জমানার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। তাঁর হাত দিয়েই রাজ্যে ‘অপারেশন বর্গা’ চালু হয়েছিল।