(বাঁ দিকে) রাজন্যা হালদার এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতিকে পাঠানো সেই ইমেলের প্রতিলিপি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বানানো ছবির মুক্তি পিছিয়ে দিলেন রাজন্যা হালদার। সোমবার রাজন্যা এবং তাঁর বন্ধু প্রান্তিক চক্রবর্তীর তরফে মেল করে বিষয়টি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যকে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিকে ঘিরেই বিতর্কের মুখে পড়েন রাজন্যা এবং প্রান্তিক। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে সাসপেন্ড করা হয় দু’জনকেই।
রাজন্যারা প্রথমে জানিয়েছিলেন, আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার দিনে তাঁদের এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটি মুক্তি পাবে। কিন্তু রবিবার তাঁরা ইমেলে লেখেন, “বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে, বিষয়টির সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে এবং বিচারবিভাগীর প্রক্রিয়ার অংশীদার হিসাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই মুহূর্তে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটি প্রকাশ করব না। আমরা এই সিনেমাটির মুক্তি স্থগিত রাখছি।”
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি। দাবি করা হয়, আরজি কর-কাণ্ড নিয়েই তৈরি হতে চলেছে ছবিটি। নাম— ‘আগমনী: তিলোত্তমাদের গল্প’। ছবির যে পোস্টার সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, সেখানেও লেখা ছিল এই ছবি নির্মিত হয়েছে ‘আরজি কর ঘটনার পটভূমিতে’। ছবিটির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যাদবপুর-ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভানেত্রী রাজন্যা। শর্টফিল্মটি প্রযোজনা করেন রাজন্যার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রান্তিক। এমন একটি ‘স্পর্শকাতর’ বিষয় নিয়ে ছবি তৈরিকে অনুমোদন করেনি তৃণমূল। পাশাপাশি, সংগঠনের কারা কী ভাবে যুক্ত, তা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দলের ছাত্র সংগঠনকে ব্যবস্থা নিতে বলে দল। সেই মতো শুক্রবার রাতেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রান্তিক এবং রাজন্যাকে সংগঠনের পদ থেকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয়েছে।
শুক্রবারই দলের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়ে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘আমরা তিলোত্তমার ঘটনার ন্যায়বিচার চাই। এই স্পর্শকাতর বিষয়কে প্রচারে ব্যবহার করার চেষ্টার আমরা বিরোধী।” অন্য দিকে, রবিবার কুণালের সঙ্গে দেখা করেন ছবিটির প্রযোজক প্রান্তিক। সূত্রের খবর, দু’জনের দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়। ওই সূত্র মারফত আরও জানা যায়, তাঁদের বানানো স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটি কুণালকে দেখান প্রান্তিক। এই বিষয়ে অবশ্য কুণাল বা প্রান্তিক, কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলেননি।
রাজন্যাদের স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির বিষয়টি সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আরজি কর মামলার শুনানিতেও ওঠে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চের কাছে ছবিটি বন্ধ করার নির্দেশ চেয়ে আবেদন করেন। যদিও প্রধান বিচারপতি জানান, ওই ছবিটি বন্ধের নির্দেশ দিতে হলে শুনানির প্রয়োজন রয়েছে। তখন বৃন্দা আবেদন জানান, সমাজমাধ্যমে নজরদারি চালানোর জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হোক। নির্যাতিতার ছবি-সহ তথ্য দেখলে তা মুছে ফেলার জন্য এই নিয়োগের আর্জি জানান তিনি।