তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে বাম-কংগ্রেস জোট।
জোটের পথে বাম-বাধা দূর হওয়ার দিনেই এমন ইঙ্গিত দিল এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনের জনমত সমীক্ষা। সমীক্ষার মতে, পশ্চিমবঙ্গে দুই পক্ষ একজোট হয়ে ভোটে লড়লে তাদের ঝুলিতে যাবে ৪৩ শতাংশ ভোট। পক্ষান্তরে তৃণমূল পেতে পারে ৪৪ শতাংশ।
শতাংশের নিরিখে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি দেখালেও আসনের বিচারে অবশ্য তৃণমূলকে বেশ খানিকটা এগিয়েই রেখেছে জনমত সমীক্ষা। তাদের মতে, বাম-কংগ্রেস জোট হলেও রাজ্যের শাসক দল ১৮২টি আসন পেতে পারে। জোট পেতে পারে ১০৭টি আসন। কিন্তু এই অঙ্ককে সাদা চোখে দেখা উচিত হবে না বলেই অধিকাংশ রাজনীতিক এবং ভোট বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, জনমত সমীক্ষায় শতাংশের হিসেবটাই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগে মানুষের মনোভাব কী, এতে তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিন্তু ভোট শতাংশকে আসনে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াটি জটিল। এবং এটা প্রায় কখনওই ত্রুটিমুক্ত হয় না। যে কারণে জনমত এবং বুথ ফেরত সমীক্ষা অনেক সময়ই মেলে না। কিন্তু সমীক্ষার ফল না-মিললেও ভোটারদের মনোভাব আঁচ করার ক্ষেত্রে এই ধরনের সমীক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করা হয় সর্বত্রই।
দ্বিতীয়ত, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টিতে এই সমীক্ষা হয়েছে ২৯ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। যখন জোট নিয়ে আলোচনা চললেও সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও ধারণা তৈরি হয়নি। তখনও সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠক পর্যন্ত হয়নি। ফলে মানুষ মতামত দিয়েছেন অনিশ্চিত সম্ভাবনার উপরে দাঁড়িয়ে। শেষ পর্যন্ত জোট হলে এবং ভোটের আগে পরবর্তী দু’মাসে তার পক্ষে হাওয়া উঠলে কয়েক শতাংশ ভোট এ দিক ও দিক হওয়া অসম্ভব নয় বলেই বিশ্লেষকদের মত। আর তা হলে আসনের অঙ্ক উল্টে গিয়ে রাজ্যে পাঁচ বছর আগে ঘটা পরিবর্তনের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে অবশ্য এই সমীক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতি না দিলেও দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাম-কংগ্রেস জোট হলে তারা ৪৩ শতাংশ ভোট পাবে। এটা ভুল। ওটা হবে ৩৩ শতাংশ।’’ তাঁর দাবি, জোট হলে বাম ও কংগ্রেসের সব ভোট এক জায়গায় আসবে এমনটা মনে করা অবাস্তব। অথচ, সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে জোট হলে বাম-কংগ্রেস মিলিত ভাবে যে ভোট পাবে, জোট না-হলে আলাদা আলাদা ভাবে পাবে ঠিক ততটাই ভোট। তবে মুখে এ কথা বললেও জোট সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের রক্তচাপ যে বাড়ছে, সে খবর মিলছে দলীয় সূত্রেই।
অন্য দিকে সমীক্ষার অঙ্ক চাঙ্গা করেছে বাম, কংগ্রেসকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘জোট হলে তৃণমূল শুধু ক্ষমতা থেকে উৎখাত হবে না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও জিততে পারবেন না!’’ আর সিপিএম কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, ‘‘তৃণমূল যে শঙ্কিত তা বোঝাই যাচ্ছে। না হলে কেউ নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বলে যে, বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিও না। ভোটাররা বুথে আসতে ভয় পাবে।’’
এই চাপানউতোরের বাইরে সবচেয়ে করুণ অবস্থা বিজেপির। দু’বছর আগে লোকসভা ভোটে রাজ্যে সাড়া জাগানো দলটি ‘পুনর্মুষিক ভব’ হতে চলেছে বলেই সমীক্ষার ইঙ্গিত। লোকসভায় ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। এ বার জোট হোক বা না-হোক, তাদের কপালে ৬ শতাংশের বেশি ভোট জুটবে না বলেই সমীক্ষার মত। আসন তো একটিও নয়! বিশ্লেষকদের বক্তব্য, সারদা কাণ্ড, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, তোলাবাজি ইত্যাদির বাড়বাড়ন্তে বড় অংশের মানুষ যে সরকারের ওপর অসন্তুষ্ট, সেটা সমীক্ষকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁদের দেওয়া জবাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বিজেপি-কে ভোট দিয়ে তাঁরা ভোট নষ্ট করতে চাইছেন না। বরং তৃণমূলকে যে পরাস্ত করতে পারবে, তাকেই ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন। সমীক্ষা বলছে, জোট না-হলেও সিপিএমের ভোট শতাংশ গত লোকসভার থেকে ৭ শতাংশ বেড়ে ৩৭ শতাংশ হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল, এই ছবিটা দেখার পরে জোটের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও কত সময় নেবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড? জবাবে কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘ভাবছি সমীক্ষার হিসেবটা কাল সকালেই ফ্যাক্স করে দিল্লি পাঠিয়ে দেব। ওঁদের বোঝা উচিত, জোট না-হলে মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে পশ্চিমবঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে কংগ্রেস।’’