ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিক সব উপনির্বাচনে বামেদের ভোট কমেছে। বৃদ্ধি হয়েছে বিজেপি-র। পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেলায় জেলায় বামেদের ঘরে আরও ভাঙন ধরিয়ে কর্মীরা যাতে গেরুয়া শিবিরে পা না বাড়ান, তার জন্য তাঁদের সতর্ক করে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সঙ্গেই নাম না করে বুঝিয়ে দিলেন, তৃণমূলত্যাগী মুকুল রায়কে নিয়ে বাম কর্মীদের ‘মোহ’ রাখার কিছু নেই!
কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার ৯৮তম বার্ষিকীর দিনে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের সভায় সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ ভাবছেন, তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই হবে। যে হেতু উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) মুখে অনেক কিছু বলছেন। আবার কেউ কেউ ওঁকে নিয়ে তিতিবিরক্ত। তাঁরা ভাবছেন, বিজেপি-কে দিয়েই তৃণমূলের মোকাবিলা হবে। আমরা বলছি, এই দু’টোই আত্মহননের পথ!’’ পুজোর মরসুম মিটলেই সিপিএমে সম্মেলনের মরসুম। সম্মেলন-পর্বে কঠোর আত্মসমীক্ষা করে ঘর গুছিয়ে নিয়ে কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার কথা বলেছেন সূর্যবাবু।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর যুক্তি, স্বৈরতান্ত্রিক পথে সরকার চালানো, ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা বা প্রতিপক্ষ দলের কার্যালয়ে চড়াও হওয়া— এ সব ঘটনাই গত ৬ বছর ধরে তৃণমূলের জমানায় তাঁরা দেখে আসছেন। এখন সেটাই জাতীয় স্তরে আরও বড় আকারে বিজেপি-কে করতে দেখা যাচ্ছে। আ়ঞ্চলিক ও জাতীয় দল হিসাবে শক্তির তফাত থাকলেও তৃণমূল এবং বিজেপি-র মনোভাবে কোনও ফারাক নেই বলেই বোঝাতে চেয়েছেন সূর্যবাবু। এই প্রেক্ষিতেই কর্মীদের প্রতি তাঁর হুঁশিয়ারি, বিজেপি-র ছাতায় গিয়ে তৃণমূলের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে ভাবলে ‘আত্মহত্যা’ করা হবে!
এই সূত্রেই মুকুলবাবুর প্রসঙ্গ টেনেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন এর মধ্যে থেকে বাইরে বেরিয়ে কিছু কথা বলছেন। কোথায় গেলেন, কত দূর গেলেন? এটাও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। কিছু লোক নির্বোধ হতে পারেন! কিন্তু ওঁকে আমরা আগেও দেখেছি। লড়াইয়ের ময়দানেই আসল পরিচয় পাওয়া যাবে!’’ নাম না করলেও সুর্যবাবুর স্পষ্ট বার্তা, তৃণমূলের প্রাক্তন নেতাকে নিয়ে বাম কর্মীদের মোহগ্রস্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
দার্জিলিঙের সাম্প্রতিক ঘটনার সূত্র ধরে সূর্যবাবু বলেছেন, কেন কোনও প্রস্তুতি ছাড়া এক পুলিশ অফিসারকে প্রাণ দিতে হল, পাহাড়ে যারা ‘মা-মা’ করছিল, তারাই কেন ‘ম্যাও-ম্যাও’ করছে— এই সব প্রশ্ন ‘বুক ঠুকে’ তুলতে হবে দলের কর্মীদের। আর সম্মেলনে শুধু ব্যক্তি সমালোচনা ছেড়ে নীতির আলোচনায় জোর দিতে হবে।