বক্তা: পুরুলিয়ায় সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
তালড্যাংরার প্রাক্তন বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্রের গ্রেফতারের ঘটনাকে গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ বলে মন্তব্য করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার বামপন্থী গণসংঠনের যৌথ মঞ্চ বিপিএমও-র ডাকে পুরুলিয়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রা শুরুর আগে শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এক সভায় তিনি বলেন, ‘‘এই সময় গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ তীব্রতর হচ্ছে। তালড্যাংরার প্রাক্তন বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওঁদের (তৃণমূল) নিজেদের মধ্যে লড়াই, অথচ গ্রেফতার হচ্ছে বামপন্থীরা! কারন এই পদযাত্রা ব্যর্থ করতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করে সভার শেষে সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘উনি যত এ সব করবেন, প্রতিরোধ তত তীব্র হবে। মানুষের লড়াই তত ঐক্যবদ্ধ হবে। এ ভাবে পদযাত্রার গতি স্তব্ধ করা যাবে না। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, আক্রমণ যত বাড়বে, আমরা তত এগোব।’’ আজ, সোমবার ছাতনা ও বাঁকুড়া শহর এবং মঙ্গলবার ওন্দা, বিষ্ণুপুরে ওই জাঠা পৌঁছবে।
কর্মীদের উদ্দেশ্যে সূর্যকান্তের পরামর্শ, ‘‘প্রতিটি বুথ ছুঁতে হবে। ছোট ছোট সভা করতে হবে। পায়ে হেঁটে পথ অতিক্রম করতে হবে। চলায় কোনও বিরাম যেন না থাকে।’’ একই সঙ্গে তাঁর সতর্কতা, আক্রমণ হলে ঝান্ডা হয়ে যাবে ডান্ডা। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষের দাবি আদায় করতে হবে। যে মানুষটা খেতে পায় না, তিনি কোন ঝান্ডা ধরেন, সেটা বড় কথা নয়। তাঁর খাবারের জন্য বামপন্থীদেরই লড়াই করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, এখনও সব মানুষ ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি। এ রাজ্যে এখন সব কিছুই কমিশন দিয়ে পেতে হচ্ছে।
একই ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারেরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বছরে দু’কোটি চাকরি কোথায় গেল? উল্টে দু’কোটি মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নোটবন্দিতে সঙ্কটে পড়েছে তাঁত শিল্প, বস্ত্র শিল্প, গয়না শিল্প ও ব্যবসায়ীরা। সেই ক্ষতি সামাল দেওয়ার আগে জিএসটি গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে।’’
এ ছাড়া, নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা, রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপন, সমান কাজে সমান মজুরি, ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৮ হাজার টাকা, ৬০ বছর বয়স হলেই প্রত্যেকের তিন হাজার টাকা পেনশন, চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ প্রথা বন্ধ করা থেকে ক্ষেতমজুর-সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, চিটফান্ডে প্রতারিতদের টাকা ফেরত, প্রতারক, মালিক, নেতা-নেত্রী, আমলাদের শাস্তি, খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা, গণবন্টনে খাদ্যপণ্য না কমানো, শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে না দেওয়া, আদিবাসীদের জন্য বনাঞ্চল অধিকার আইন কার্যকর করা, আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রাবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত না করা সহ বিভিন্ন দাবিতে রাজ্যের চারটি স্থান থেকে এ দিনই জাঠা কর্মসূচি নিয়েছে যৌথ মঞ্চ।
সূর্যবাবু বলেন, ‘‘সিউড়িতে বিমান বসু, ফরাক্কায় শ্যামল চক্রবর্তী, কোচবিহারে সুজন চক্রবর্তী পদযাত্রায় রয়েছেন।’’ এ দিন পুরুলিয়া থেকে সূর্যবাবুর সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসি নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়ও সামিল হন। পুরুলিয়া জেলার বামনেতৃত্বও ছিলেন। পুরুলিয়া-বাঁকুড়া (৬০-এ) জাতীয় সড়ক ধরে পদযাত্রা চলে। কলকাতায় তা ৩ নভেম্বর পৌঁছনোর কথা।
১৯৮২-র মার্চে পুরুলিয়ার সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে হুড়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছিল সিপিএম। সে দিনের পদযাত্রায় সামিল বিভূতি পরামাণিক এ দিনও রিলে পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আজ নকুলদাকে (সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন জেলা সিপিএম সম্পাদক নকুল মাহাতো) খুব মনে পড়ছে। সে দিনের পদযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই।’’