গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সিবিআইয়ের অপব্যবহার করেছে কেন্দ্র— পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই অভিযোগের গুরুত্বকে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, কেন্দ্র যে সিবিআইয়ের অপব্যবহার করছে, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কেন্দ্র এই গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল শীর্ষ আদালতে। কেন্দ্রের বিরোধিতা খারিজ করে শীর্ষ আদালত রায় দিল, মামলার শুনানি চলবে। সিবিআই এফআইআর দায়ের করতে গেলে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেই বক্তব্যেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে মনে করছে শীর্ষ আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৩ অগস্ট।
পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই তদন্তের ঢালাও ছাড়পত্র বা ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহার করার পরেও সিবিআই রাজ্যের অনুমতি ছাড়া একের পর এক মামলায় এফআইআর করতে শুরু করায় সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। গত তিন বছর ধরে এই মামলা শীর্ষ আদালতে ঝুলে রয়েছে। রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। আগের শুনানিতে তিনি জানান, রাজ্যের অনুমতি বা ‘জেনারেল কনসেন্ট’ ছাড়া সিবিআই কোনও মামলায় তদন্ত করতে পারে না। রাজ্যে ঢোকার আগে তাদের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। না-হলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এর প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান তিনি। অভিযোগ, সিবিআই কোনও মামলায় ঢুকলে তার সূত্র ধরে ইডিও ঢুকে পড়ছে। এই পরিস্থিতির বদল হওয়া দরকার।
রাজ্যের আরও বক্তব্য ছিল, ২০১৮ সালে সিবিআই তদন্তের ঢালাও ছাড়পত্র বা ‘জেনারেল কনসেন্ট’ প্রত্যাহার করার পরেও সিবিআই রাজ্যের অনুমতি ছাড়া একের পর এক মামলায় এফআইআর করতে থাকে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি ‘অপব্যবহার’ করার অভিযোগ তোলা হয়।
রাজ্যের যুক্তির পাল্টা যুক্তি দিয়েছিলেন কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা। তিনি জানান, সিবিআই কেন্দ্রের অধীন নয়। এটি একটি স্বাধীন সংস্থা। ফলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে করা এই মামলা গ্রহণযোগ্য হওয়াই উচিত নয়। সলিসিটর জেনারেল বলেছিলেন, ‘‘সিবিআই একটি স্বাধীন সংস্থা। কেন্দ্র তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না। কেন্দ্র কোনও এফআইআর দায়ের করে না। এই মামলা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে না করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে করা হয়েছে।’’ আদালতে এই মামলার তথ্য গোপনের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। বলেন, ‘‘এর আগে একই বিষয়ে অন্য দু’টি মামলা করা হয়েছিল রাজ্যের তরফে। এই কোর্টে সেই তথ্য গোপন করা হয়েছিল। কী ভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তথ্য গোপন করা যায়? এটাই মামলা খারিজের অন্যতম কারণ হতে পারে।’’
শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের বিরোধিতা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা মেনে নিল। তবে বুধবারের এই পর্যবেক্ষণ মূল মামলার রায়ে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। একই সঙ্গে জানিয়েছে, কোন ধরনের তদন্তে, বা কাদের বিরুদ্ধে তদন্তে সিবিআইকে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে, কোন ক্ষেত্রে নিতে হবে না, আগামী ১৩ অগস্টের শুনানির দিনেই তার কাঠামো বেঁধে দেওয়া হবে শীর্ষ আদালতের তরফ থেকে।