তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে একটি মিছিল থেকে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাবালিকা কন্যার বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্যের মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতারির পর পুলিশি হেফাজতে তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। ওই মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশের উপর সোমবার অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে হাই কোর্টের একক বেঞ্চ, পরে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ— উভয় এজলাসেই সিবিআই তদন্তের পক্ষেই রায় দেওয়া হয়েছিল। হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। সোমবার শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূয়ানের বে়ঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। সেখানে সিবিআই তদন্তের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে।
বিতর্কের সূত্রপাত, সম্প্রতি আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত একটি পদযাত্রায়। অভিযোগ, ওই পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারী এক জনকে বলতে শোনা যায়, আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় তাঁর পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় আর্থিক সাহায্য দিলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়? ওই প্রতিবাদ মিছিল থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নাবালিকা কন্যাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে (যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
ওই ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ডায়মন্ড হারবার থানায় দুই তরুণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক মহিলা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার নিমতা থেকে দুই তরুণীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতারির পরে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ধৃতেরা। অভিযোগ ছিল, পুলিশি হেফাজতে তাঁদের মারধর করা হয়েছে।
মামলাটি প্রথমে উঠেছিল হাই কোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের একক বেঞ্চে। পুলিশের উপর অনাস্থার কথা জানিয়ে ওই ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের উপর দিয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি বলেছিলেন, “যে ভাবে হেফাজতে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে, তাতে পুলিশের উপর আদালতের আর ভরসা নেই। তাই ওই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়া হোক।’’
পরে মামলাটি যায় হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেও একক বেঞ্চের নির্দেশই বহাল থাকে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ জানিয়েছিল, মামলাকারীর উপর শারীরিক নির্যাতনের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে মেডিক্যাল রিপোর্টে। হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রেখেছিল।