SSC Recruitment Case

মমতার মন্ত্রিসভার অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে সিদ্ধান্তের মামলায় অবশেষে প্রকাশ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামা, কী কী বলা হয়েছে?

অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশ গত ৮ এপ্রিল খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। বৃহস্পতিবার এই মামলার নির্দেশনামা প্রকাশিত হল।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৫৬
Share:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অতিরিক্ত শূন্যপদ (সুপারনিউমেরারি পোস্ট) তৈরিতে হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। কলকাতা হাই কোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশ গত ৮ এপ্রিল খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। বৃহস্পতিবার এই মামলার নির্দেশনামা প্রকাশিত হল।

Advertisement

নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, রাজ্য মন্ত্রিসভার অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেননি মামলাকারীরা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও আর্জি ছিল না। এমনকি এই সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধেও আদালতে যে কোনও আবেদন জমা পড়েনি, সে কথাও নির্দেশনামায় বলা হয়েছে।

তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, এই নির্দেশ শুধুমাত্র অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি নিয়ে সিবিআই তদন্তের উপর কার্যকর হবে। বাকি বিষয়ে সিবিআই তদন্ত এবং চার্জশিটের উপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না।

Advertisement

২০২২ সালেই এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের প্রেক্ষিতে কিছু ‘অযোগ্যে’র চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। ওই সময়েই প্রায় ছ’হাজারের কাছাকাছি ‘সুপারনিউমেরারি’ পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা দফতর। ওই বছরের ৫ মে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে এই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এই প্রসঙ্গে শীর্ষ আদালতের নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ৭৪ এবং ১৬৩ ধারা অনুযায়ী, মন্ত্রিসভার কোনও সিদ্ধান্তের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের অনুমোদন বা পরামর্শ থাকলে আদালত ওই বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারে না।

সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যপালের অনুমোদনও নেওয়া হয়। সেই কারণে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। নির্দেশনামা অনুযায়ী, ২০২২ সালের ৫ মে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে দেখা যাচ্ছে, ১৯৯৭ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর আইনে অনুচ্ছেদ ১৯ অনুযায়ী ওয়েট লিস্টেড বা অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। ওই বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টে বিচারাধীন। নির্দেশনামায় সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, হাই কোর্টে মামলা বিচারাধীন ছিল। অযোগ্যদের বাছাই করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। সেই সময় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে তখন মন্ত্রিসভা ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।

অভিযোগ উঠেছিল যে, বেআইনি ভাবে নিযুক্তদের বাঁচানোর জন্যই সুপারনিউমেরারি বা অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামায় এসএসসিকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, মন্ত্রিসভা যে সময় ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন যোগ্যদের ক্রমতালিকা বদলে বেআইনি ভাবে যে নিয়োগ হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কোনও কিছু লুকোনোর ছিল না। একই সঙ্গে ওই নির্দেশনামায় বলা হয়েছে, সুপারনিউমেরারি পদ নিয়ে হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা যথাযথ ছিল না। সব দিক বিবেচনা করে হাই কোর্টের অতিরিক্ত শূন্যপদ নিয়ে সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত নির্দেশ খারিজ করার কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

প্রসঙ্গত, এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা পরে হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে যায়। গত বছরের ২২ এপ্রিল বিশেষ বেঞ্চও জানায়, সুপারনিউমেরারি পদ তৈরির সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। সিবিআই প্রয়োজনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে বলেও জানিয়েছিল হাই কোর্টের ওই বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় রাজ্য। সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি নিয়ে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয়। গত ৮ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি খন্নার বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement