আরজি করের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা দায়িত্বে এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনী। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘আমরা আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করছি।’’ চিকিৎসকেরা যাতে আবার কাজে ফিরতে পারেন, তাই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানায় শীর্ষ আদালত। আরজি করে সিআইএসএফ বা সিআরপিএফ মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু হাসপাতাল চত্বরে নয়, আরজি করের হস্টেলেও থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সিআইএসএফ এমন বাহিনী, যারা বিমানবন্দর, কয়লা খনির মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। ভোটের সময়ও ব্যবহার করা হয়। আরজি করে সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে ওই হাসপাতালের নিরাপত্তাকেও সুপ্রিম কোর্ট তেমন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উন্নীত করল বলে মনে করা হচ্ছে।
মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই উত্তাল আরজি কর। বিক্ষোভ চলছে হাসপাতাল চত্বরে। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আন্দোলনকারীরা যেমন ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় বিচারের দাবি তুলছেন, তেমনই নিরাপত্তা সুনিশ্চিতের কথাও বলছেন। শুধু আরজি করে নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দিল্লির এমস-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি চলছে। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের এ বার কাজে ফেরার অনুরোধ করলেন প্রধান বিচারপতি।
মঙ্গলবার আরজি কর মামলার শুনানিতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে পুলিশ-প্রশাসন। শহর জুড়ে মেয়েদের ‘রাত দখল’ কর্মসূচি চলাকালীন একদল দুষ্কৃতী আরজি করে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর করা হয়। সেই ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মঙ্গলবারের শুনানিতে বিষয়টি উত্থাপন করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। উদ্বেগপ্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তিনি বলেন, “আমরা খুবই চিন্তিত। প্রতিবাদকারীদের বাধা দিতে বলপ্রয়োগ করে রাজ্য। আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না, স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজ্য কী ভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর করতে দিল?”
মঙ্গলবারের শুনানিতে চিকিৎসকদের পক্ষের আইনজীবীরা আরজি করে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘গত ১৪ অগস্ট যে তাণ্ডব ঘটেছে, তার পর থেকেই হাসপাতালে কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা।’’ তার পরই পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশও করেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ নিরাপত্তা দিতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিল।’’ তার পরই সলিসিটর জেনারেলকে আরজি করে পর্যাপ্ত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে বলেন প্রধান বিচারপতি।
আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশকে স্বাগত জানালেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে কুণাল লেখেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীতে আপত্তি নেই তৃণমূলের।’’ একই সঙ্গে আরজি করে হামলার নেপথ্যে ‘রাম-বাম আঁতাঁত’কেই দায়ী করেন তিনি। কুণাল জানান, রাম-বাম অপশক্তির প্ররোচনা, উস্কানি যদি ওদের বাহিনী সামলাতে চায়, তবে তা সামলাক। তাতে তৃণমূলের কোনও আপত্তি নেই।