৭ কোম্পানি বাহিনী সরছে, থাকছে বাকি ৮

কেন্দ্রের আধা সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। শুক্রবার সেই রায়কেই খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানাল, পাহাড় থেকে এখনই সরানো হবে ৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাকি ৮ কোম্পানি আধা সেনা অবশ্য আরও এক মাস মোতায়েন থাকবে দার্জিলিং-কালিম্পঙে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

দার্জিলিঙে আধাসেনার টহল। —ফাইল চিত্র ।

কেন্দ্রের আধা সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। শুক্রবার সেই রায়কেই খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানাল, পাহাড় থেকে এখনই সরানো হবে ৭ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাকি ৮ কোম্পানি আধা সেনা অবশ্য আরও এক মাস মোতায়েন থাকবে দার্জিলিং-কালিম্পঙে। একই সঙ্গে, শীর্ষ আদালতে প্রশ্ন উঠে গেল, হাইকোর্টের আদৌ এই বিষয় নিয়ে মামলা শোনার এক্তিয়ার আছে কি?

Advertisement

সেনা সরানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে কেন্দ্র ও রাজ্য দুই পক্ষই অবশ্য নিজেদের লাভ হয়েছে বলে মনে করছে। কেন্দ্রের ধারণা, পাহাড় থেকে তাদের বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকেই সিলমোহর দিল সর্বোচ্চ আদালত। আর রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তো ২০ অক্টোবরের পরে পুরো ১৫ কোম্পানিই তুলে নিতে চেয়েছিল। তাই ৮ কোম্পানি থেকে যাওয়ায় সুবিধাই হল।’’

কেন কেন্দ্র বাহিনী তুলে নিতে এত মরিয়া?

Advertisement

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুক্তি, হিমাচল-গুজরাতের ভোট এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রুখতে আরও বেশি বাহিনী প্রয়োজন। সে কারণেই পাহাড়ে মোতায়েন ১৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে ১০ কোম্পানি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়।

রাজ্য তাতে আপত্তি করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে স্থগিতাদেশও জারি করে। এ দিনই ছিল সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদের শেষ দিন। তবে কেন্দ্র আগেই স্থগিতাদেশের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। এ দিন সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলারই শুনানি ছিল। সেখানে হাইকোর্টের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মনিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘কোথায় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে, কোথায় করতে হবে না, তা নিয়ে ২৪টা হাইকোর্ট যদি নির্দেশ দিতে শুরু করে, তা হলে চরম বিভ্রান্তি তৈরি হবে।’’ তাঁর মতে, বাহিনী মোতায়েন প্রশাসনের এক্তিয়ারেই থাকা উচিত।

সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বেঞ্চ রায় দেয়, এ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্ট আর হস্তক্ষেপ করবে না। শীর্ষ আদালতেই ফের ২৭ নভেম্বর শুনানি হবে। দু’টি সাংবিধানিক প্রশ্নেরও ফয়সালা হবে। এক, হাইকোর্টের এ বিষয়ে এক্তিয়ার রয়েছে কি না। দুই, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্য চাইলে বাহিনী দিতে কেন্দ্র বাধ্য কি না। এ নিয়ে রাজ্যও তার বক্তব্য জানাবে। তত দিন পর্যন্ত দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে ৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ঘটনাচক্রে, আজ হাইকোর্টেও এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তার আগেই হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয়।

বাহিনী সরানোর প্রসঙ্গে কেন্দ্রের যুক্তি নিয়ে এ দিন প্রধান বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন, হিমাচলের ভোট কবে? কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, ভোটের দেরি থাকলেও বাহিনী সরাতে অনেক সময় লাগে। তা ছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, জুলাই মাস থেকে পাহাড়ে বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। সেখানে বন্‌ধও উঠে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব নিজেই ১৫ অক্টোবর চিঠি লিখে জানিয়েছেন, দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি এখন অনেক শান্তিপূর্ণ।

শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি অবশ্য মন্তব্য করেন, ‘‘দার্জিলিং-কালিম্পংয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু পদক্ষেপ করতে হবে। কারণ আমাদের পিরামিডের চূড়ায় দেশের নাগরিকরাই রয়েছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা আপনাদেরই দায়িত্ব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement