ব্রিগেডে বলছেন এসইউসি সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ। —সংগৃহীত।
ব্রিগেড সমাবেশ থেকে সিপিএম ও অন্য বামন্থীদের নিশানা করল এসইউসি। প্রশ্ন তুলল জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোটে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএমের একসঙ্গে থাকা নিয়ে। যে প্রশ্ন আগেই তুলেছে বিজেপি। শিবদাস ঘোষের শতবর্ষ পালনের সমাপন অনুষ্ঠান উপলক্ষে দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশের আয়োজন করেছিল এসইউসি। সমাবেশে শনিবার ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই। দেশের ২৫টি রাজ্য থেকে ট্রেনে ও বাসে সমর্থকেরা এসেছিলেন সমাবেশে যোগ দিতে। বক্তৃতা চলাকালীন লম্বা সময় তাঁরা সুশৃঙ্খল ভাবে ময়দানে বসে ছিলেন।
দীর্ঘ বক্তৃতায় এসইউসি-র বর্ষীয়ান সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ এ দিন বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সিপিএম বা পুরনো সিপিআই মার্ক্সবাদী আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত দল নয়, তাদের কোনও চিন্তা-নায়ক নেই। ক্ষমতার রাজনীতি না করেও এসইউসি-র সেই ‘প্রকৃত সম্পদ’ আছে বলে তাঁর দাবি। তাঁর মন্তব্য, যে সব দল এক সময়ে এসইউসি সম্পর্কে ‘বক্রোক্তি’ করেছিল, তাদের অনেকেই এখন নিশ্চিহ্ন। সমাবেশেই প্রভাসবাবু বলেছেন, ‘‘বাংলা, ত্রিপুরা ও কেরলে সিপিএম দীর্ঘ সময় সরকার চালিয়েছে। এই রাজ্যে ৩৪ বছর একটানা সরকারে থেকেও সেই দলের এখন কী অবস্থা? কংগ্রেসের সঙ্গে তারা জোট করেছে। এক জন পীরকে ধর্মনিরপেক্ষ বানানো হয়েছে। আবার এখন জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী একটা জোট হয়েছে, যেখানে সিপিএম আছে, তৃণমূলও আছে। রাজ্যে তারা পরস্পরের সঙ্গে লড়ছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘এসইউসি কিন্তু মাথা নত করেননি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছে!’’
রাজ্যে বাম জমানার শেষ দিকে তৃণমূলের সঙ্গে যে এসইউসি-র জোট হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গ অবশ্য এ দিনের সমাবেশে শোনা যায়নি। সমাবেশ থেকে এসইউসি মূলত সিপিএম-সহ বামপন্থী দলগুলিকে বেশি নিশানা করায় পাল্টা মুখ খুলেছে সিপিএমও। তাদের বক্তব্য, দেশে বিজেপি বা রাজ্যে তৃণমূলের চেয়েও সিপিএম-বিরোধিতা যে এসইউসি-র কাছে বেশি জরুরি, তা ফের প্রমাণিত। এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘আমাদের অনেক নেতা যখন জেলে, সেই সময়ে লাল ঝান্ডা নিয়ে এসইউসি-র জন্ম হয়েছিল তারাই আগমার্কা বামপন্থী, এটা বলার জন্য। সেই কথাটাই তারা বলছে। সাম্প্রতিক কালে তারা এক মাত্র সাংসদ পেয়েছিল তৃণমূলের সঙ্গে একসঙ্গে লড়ে। এখন আবার এত কথা তারা বলছে, যাতে সামনের নির্বাচনে একটা আসন পায়!’’
সিপিএমের মতোই তৃণমূল ভোট লুট করে নির্বাচনে জিতছে, এই অভিযোগও এ দিন করেছেন প্রভাসবাবু। সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল সরকার অতীতের জমিদারদের কাঙালি ভোজনের মতো করে লক্ষ্মীর ভান্ডার-সহ নানা ‘শ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে, সবই ভোটের জন্য।’’ জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ কোন ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছে, কংগ্রেস অতীতে কি দাঙ্গা করেনি, সে সব প্রশ্নও তোলা হয়েছে সমাবেশ থেকে। বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিনে’র গাড়িতে আদানিরা চড়ছেন, এ কথাও বলেছেন প্রভাসবাবু। মণিপুরের প্রসঙ্গ তুলে এসইউসি-র পলিটব্যুরো সদস্য সত্যবান সমাবেশে বলেছেন, ‘‘বিজেপিকে নিশ্চয়ই ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। কিন্তু কেবল ভোট রাজনীতিতে মূল সমস্যার সমাধান হবে না৷ চাই শক্তিশালী গণ-আন্দোলন।’’