বড়রা তেমন সফল হয়নি। ছোটরা কিন্তু করে দেখাচ্ছে।
রাজ্যে বৃহৎ পুঁজির লগ্নি টানতে ‘এক জানলা’ নীতি চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিনিয়োগকারীদের হয়রানি কমাতে আবেদনপত্র এক ধাক্কায় ৯০ থেকে ৭ পাতা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ১১ থেকে নেমে গিয়েছে ১৫-এ।
বিনিয়োগের মঞ্চে বড় শিল্পের যখন এই হাল, তখন একটু অন্য পথে হেঁটে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে কিন্তু ভাল সাফল্য পেয়েছে এই রাজ্য। কী ভাবে? সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রের খবর, লগ্নি টানতে ‘এক জানলা’-র পরিবর্তে তারা চালু করেছে ‘ফিজিক্যাল উইন্ডো’ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় প্রতিটি জেলায় জেলা শিল্প কেন্দ্রগুলির লাগোয়া খোলা হয়েছে একটি ‘শিল্প সহায়তা কেন্দ্র’। সেখানে যে সমস্ত আধিকারিক থাকছেন, তাঁদের অনেকেই জোকা আইআইএম থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
এই সহায়তা কেন্দ্র থেকেই ক্ষুদ্র সংস্থাগুলি ব্যবসা করার লাইসেন্স-সহ যাবতীয় ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন। দফতরের এক কর্তা জানান, ‘ফিজিক্যাল উইন্ডো’ ব্যবস্থায় দফতরের কর্মীরা অন্যান্য দফতরের থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স ও ছাড়পত্র জোগাড় করে আনছেন। আবেদনকারীকে কোথাও যেতে হচ্ছে না। আধিকারিকদের দাবি, সংস্থাগুলি দ্রুত ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে বলে প্রকল্প রূপায়ণের সময়সীমাও আগের তুলনায় কমেছে। দফতর সূত্রে খবর, ছোট খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, চাল কল, বেকারি, বেসন কল, গুঁড়ো মশলা তৈরির কারখানা, সরষের তেল কল, লাইম স্টোন পাউডার-সহ বিভিন্ন ধরনের রসায়নিক তৈরির কারখানার সঙ্গে বেশ কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পেরও আবেদনপত্র জমা পড়েছে।
সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ‘ফিজিক্যাল উইন্ডো’ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় গত অর্থবর্ষের (২০১৫-’১৬) প্রথম ছ’মাসে প্রায় ছয় হাজার সংস্থার হাতে নতুন লাইসেন্স ও বিভিন্ন ধরনের অনুমোদন তুলে দেওয়া হয়েছে। যা তার আগের বছরগুলির তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি। নবান্নের শীর্ষ কর্তাদের দাবি, সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে রাজ্যে। এক বছরের হিসাবে এটা কম নয়।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘ছোট সংস্থাগুলির স্বার্থের কথা ভেবেই দফতরের এই উদ্যোগ। তাতে ভাল কাজও হচ্ছে।’’ প্রশাসনের কর্তারা জানান, এ রাজ্যে বড় বিনিয়োগের বাজারে মন্দা চলতে থাকায় ছোট ও মাঝারি শিল্পেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করেন, ছোট শিল্পে কর্মসংস্থান বেশি হয়।
এই কারণেই ‘ফিজিক্যাল উইন্ডো’ চালু করা।
রাজ্যের এই সাফল্যের দাবির সঙ্গে একমত ব্যবসায়ীদের সংগঠনও। ফেডারেশন অব স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ (ফসমি)-র সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের মতে, গত এক বছরে তাঁদের সদস্যদের অভিজ্ঞতা বদলে গিয়েছে। ব্যবসা করার জন্য দ্রুত লাইসেন্স পেতে আর তেমন সমস্যা হচ্ছে না।