সুব্রত ঠাকুর
মতুয়া ঠাকুরবাড়ি ঘিরে রাজনীতিতে আচমকা নতুন মোড়!
মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের ‘অধিকার রক্ষার স্বার্থে’ রাজনৈতিক-প্রশাসনিক পদের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা করলেন সদ্যপ্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের ভাইপো এবং রাজ্যের মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছেলে সুব্রত ঠাকুর। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন নিজের ফেসবুক পেজ-এ। কপিলকৃষ্ণের মৃত্যুতে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন যে হেতু অনিবার্য এবং টিকিট পাওয়া নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই দ্বন্দ্ব আছে, সেই প্রেক্ষিতে মঞ্জুল-পুত্রের এই হঠাৎ ঘোষণা নতুন জল্পনা তৈরি করেছে। কয়েক মাস আগে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়ার অন্যতম দাবিদার ছিলেন সুব্রতই। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বেছে নিয়েছিলেন কপিলকে।
রাজ্য রাজনীতিতে সুব্রত এখনও ততটা পরিচিত নন। দলের কোনও পদেও তিনি নেই। তবে তিনি গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তাঁর এ দিনের ঘোষণার অর্থ, ওই পদ থেকেই তিনি ইস্তফা দেবেন। বনগাঁ আসনে তৃণমূলের টিকিট যে মতুয়া বাড়িরই কেউ পাবেন, তা এক রকম নিশ্চিত। দলের একাংশ মনে করছেন, কপিলের স্ত্রী মমতাবালাদেবীকেই চাইছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু ওই আসনের দাবিদার হিসাবে মঞ্জুল যে নিজের ছেলেকে এগিয়ে দিতে চাইবেন, সেটাও প্রত্যাশিত। জেলা তৃণমূলের একটি অংশের ধারণা, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়ে সুব্রত আসলে দেখাতে চাইছেন, মতুয়াদের স্বার্থে তিনি কতটা নিবেদিতপ্রাণ। দেখতে চাইছেন, তাঁকে পদে রাখতে দল কতটা তৎপর হয়। সেই সূত্রেই দলে গুরুত্ব বাড়িয়ে নিতেও আগ্রহী তিনি।
দলের অন্দরের এই জল্পনাকে উসকে দিয়েছেন মঞ্জুল নিজেও। তিনি এ দিন বলেন, “সুব্রত এখন বড় হয়েছে। দাদার মৃত্যুর পরে মতুয়ারা এখন সুব্রতকেই চাইছেন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” আর কী বলছেন সুব্রত নিজে? তাঁর কথায়, “আমি দলের কোনও পদে নেই। কিন্তু আমি সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক। কপিলকৃষ্ণ ছিলেন সঙ্ঘাধিপতি। তাঁর মৃত্যুর পরে আমার দায়িত্ব বেড়েছে। দলের বাইরে থেকে মতুয়াদের জন্য যদি কাজ করি, তাতে বাধ্যবাধকতা কম থাকে।” কিন্তু লোকসভা ভোটে যদি তৃণমূলের টিকিট পান, তা হলে কী করবেন? সুব্রতর সংক্ষিপ্ত জবাব, “দল যদি কিছু বলে, পরিস্থিতি অনুযায়ী দেখব।”
সুব্রতের সিদ্ধান্ত অবশ্য ইতিমধ্যেই কানে গিয়েছে দলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তিনি ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “একই সঙ্গে সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজ করাই যায়। তবে ও যদি মতুয়াদের উন্নয়নে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমরা ওর পাশে আছি।” স্থানীয় রাজনীতিতে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা ধ্যানেশনারায়ণ গুহ মঞ্জুল-বিরোধী গোষ্ঠী হিসাবেই পরিচিত। সুব্রতের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর টিপ্পনি, “এই ঘোষণার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও উদ্দেশ্য আছে! মতুয়াদের জন্য কাজ চালাতে গেলে যদি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পদ ছাড়তে হয়, তবে তো ওঁর বাবারও (মঞ্জুল) মন্ত্রিত্ব ছাড়া উচিত!”
সুব্রতের ফেসবুক পেজ-এ দেখা যাচ্ছে, ‘মতুয়া আন্দোলনের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে, প্রয়াত সঙ্ঘাধিপতি শ্রী কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের অবর্তমানে মতুয়া ধর্ম ও উদ্বাস্তুদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে’ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মতুয়া ধর্ম রক্ষার জন্য আগামী দিনে মতুয়াদের নিজেদের বলে বলীয়ান হওয়াই লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেও ফেসবুকে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। যে হেতু তিনি বিধায়ক, মন্ত্রী বা জেলা সভাপতির মতো কোনও পদে নেই, তাই দলে থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না বলেও মনে করছেন সুব্রত। দলকে পরে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন বলে পরে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কপিলের বিরুদ্ধে বনগাঁ আসনে বিজেপি-র টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কেডি বিশ্বাস। এ বারও এই আসনে তাঁর টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছে দলের একাংশ।
সুব্রতর সিদ্ধান্তের কথা শুনে তিনি বলেন, “উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবি-সহ অন্য দাবিগুলি নিয়ে আন্দোলন করতে চেয়ে এমন সিদ্ধান্ত যদি উনি নিয়ে থাকেন, তবে তা খুবই ভাল। কিন্তু গত ৩৪ বছরে তো বটেই, তৃণমূলের আমলেও উদ্বাস্তুদের অধিকার রক্ষা হয়নি। সুব্রতের বাবা তো উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরেরই মন্ত্রী। মতুয়াদের অধিকারের কথা বলতে চাইলে তো মমতা, মঞ্জুল সকলের ব্যর্থতার কথাই সুব্রতকে প্রকাশ্যে বলতে হবে! তা উনি পারবেন তো?”
প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্তের আগেই প্রথম ‘চাল’ দিয়ে জল মাপতে নেমে পড়লেন ঠাকুরবাড়ির এক উত্তরসূরি!