সম্মান: নিহত বিভুরঞ্জন দাসের মৃতদেহে মালা দিচ্ছেন সুব্রত বক্সী। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল বলল, ‘আমাদের লোক’কে খুন করেছে বিজেপি। শাসকের বিরুদ্ধে ‘দেহ রাজনীতি’র অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি বিজেপি দাবি করল, দুষ্কৃতী এনে তৃণমূলই হামলা করেছে। আর নিহতের পরিজনেরা বললেন, ‘‘আর কত? অনেক তো হল।’’
বুধবার সন্ধ্যায় কেশিয়াড়ির খাজরায় খুন হন বিভুরঞ্জন দাস। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পরিবার বা তৃণমূল পুলিশে অভিযোগ জানায়নি। স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেনি পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
এ দিন বিকেলে মেদিনীপুর মে়ডিক্যালে পৌঁছন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সঙ্গে সাংসদ মানস ভুঁইয়া। ময়নাতদন্তের পরে দেহ ঢেকে দেওয়া হয় ফুল-মালায়। সু্ব্রতবাবু-সহ অন্য নেতারা মালা দেওয়ার পর শববাহী গাড়ি কেশিয়াড়ি রওনা দেয়। তবে সুব্রতবাবু যাননি। মালা দেওয়ার সময়ই মৃতের এক পরিজন বলে ওঠেন, ‘‘আর কত? এ বার গাড়িটা ছাড়ুন।’’ শববাহী গাড়ির সামনে লাগানো ফ্লেক্সে মৃতের পদবি ভুল ছাপা হয়েছিল। পরে সাদা কাগজে ভুল ঢেকে দাস লেখা হয়।
সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘খুনের রাজনীতি আমদানির চেষ্টা করছে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা দল।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘খড়্গপুর থেকে দুষ্কৃতী এনে তৃণমূলই হামলা করেছে।’’ বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশও সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘বিভুরঞ্জন রাজনীতি করতেন না। দেহ-রাজনীতি করছে তৃণমূল। সিবিআই তদন্ত দাবি করছি।’’
এ দিন বিভুরঞ্জনের বা়ড়িতে ভিড় করেন তৃণমূলের ছোট-বড় নেতারা। সত্যি কি তৃণমূল করতেন বিভুরঞ্জন? নিহতের স্ত্রী সীমা দাস বলেন, “আমার স্বামী তৃণমূল নেতা ভুষণ পুষ্টির দোকান ভাড়ায় নিয়েছিল। সেই সূত্রে তৃণমূলকে সমর্থন করত। তবে কখনও মিটিং-মিছিলে যায়নি।” সীমা যখন সাংবাদিকদের এ সব বলছেন, তখনই এক তৃণমূল
নেতা সাংবাদিকদের উদ্দেশে গর্জে ওঠেন, ‘‘একজন সক্রিয় কর্মীকে কী বানাতে চাইছেন?’’ বিভুরঞ্জন যেখানে দোকান চালাতেন, সেই খাজরা বাজারের ব্যবসায়ীদের একাংশও তাঁকে সক্রিয় তৃণমূলকর্মী মানতে নারাজ। এ দিন বাজার বন্ধ ছিল। হয়েছে মৌনী মিছিলও। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা স্বর্ণজ্বল চন্দ বলেন, “উনি তৃণমূল করতেন এটা ঠিক নয়। সকলেই পেটের টানে ব্যবসা করি। যেভাবে আমাদের এক সদস্যের মৃত্যুতে রাজনীতি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে তা মানতে পারছি না।”
তৃণমূলের অভিযোগ, ভূষণই বিজেপির ‘গুন্ডা’দের লক্ষ্য ছিল। বিজেপির পাল্টা দাবি, তাদের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য দুলাল দাসকে মারতে এসেই গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। খাজরা বাজারে পানের গুমটি রয়েছে দুলালেরও। এ বারের ভোটে ভূষণকে হারিয়েছেন এই দুলালই। স্থানীয়দের আবার প্রশ্ন, বিভুরঞ্জন যদি সক্রিয় তৃণমূলকর্মী হন, তা হলে কেন বিজেপির বন্ধে দোকান বন্ধ রাখলেন? বিজেপির দুষ্কৃতীরাই বা বন্ধ ওঠার পরে হামলা চালাল কেন? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘সন্ত্রাস ছড়াতেই বন্ধের পরে হামলা হয়।’’