Jadavpur University Agitation

আচরণ ‘ছাত্রসুলভ নয়’, তা সত্ত্বেও ‘কথা বলতে রাজি’ উপাচার্য, রাতভর অবস্থান চালালেন পড়ুয়ারা

মঙ্গলবারের পর বুধবারও থমথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। রাতভর অবস্থান চলেছে। চলছে ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ডিএসএফ-সহ অতিবাম ছাত্র সংগঠনগুলি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫ ১১:০৮
Share:
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ কর্মসূচি। ছবি: পিটিআই।

বিকেল ৪টে পর্যন্ত সময় রয়েছে। বেঁধে দেওয়া এই সময়সীমার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে! মঙ্গলবার এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।‌ অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পড়ুয়ারা। সেই আবহেই উপাচার্য জানালেন, তাঁর কাছে মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও ছাত্রছাত্রীদের তরফে কোনও দেখা করা বা কথা বলার আবেদন আসেনি। সোমবার যে একটি মাত্র ইমেল পেয়েছেন, সেটির ভাষাও ‘ছাত্রসুলভ নয়’! ‌

Advertisement

উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত বলেন, ‘‘আমি ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে সব সময়ই প্রস্তুত। কিন্তু তার জন্য ছাত্রসুলভ আচরণ হওয়া প্রয়োজন। সোমবার আমার কাছে একটি ইমেল আসে। তাতে বলা হয়, দুপুর ২টোর মধ্যে পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে হবে। সেই ইমেলের ভাষা আদৌ ছাত্রসুলভ ছিল না।’’ উপাচার্য জানিয়েছেন, সেই শেষ! তার পর থেকে পড়ুয়াদের তরফে মঙ্গলবার রাত পর্যন্তও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। আলোচনার জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে কোন‌ও রকম প্রস্তাবও আসেনি। সেই প্রস্তাব পেলে তিনি নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন। সঙ্গে ক্ষুব্ধ উপাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘আমি সর্বদা ছাত্রদের পাশে রয়েছি। অথচ আমি যখন হাসপাতালে ছাত্রদের দেখতে গেলাম, তখন যে আচরণ তাঁরা করেছিলেন, ইমেলে সেই বিষয়ের উল্লেখ নেই কেন? আলোচনার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। তা ছাত্রদেরই ফিরিয়ে আনতে হবে।’’

যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ পড়ুয়ারা। এসএফআই নেতা শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘উপাচার্যের যে রকম আমাদের আচরণ ছাত্রসুলভ মনে হচ্ছে না, একই ভাবে আমাদেরও ওঁর ভূমিকা উপাচার্যের মতো মনে হচ্ছে না! উনি যদি উপাচার্যের মতন আচরণ করেন, তা হলে আমাদের কাছ থেকেও ছাত্রসুলভ আচরণ পাবেন।’’ ছাত্রদের আর‌ও বক্তব্য, ঘটনার পর থেকে বহু বার তাঁর সঙ্গে কখন‌ও ইমেল বা কখন‌ও ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তিনি কোনও উত্তর দেননি। বুধবার বিকেল ৪টের মধ্যে উপাচার্য না এলে বৈঠক করে আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা স্থির করবেন পড়ুয়ারা।

Advertisement

মঙ্গলবারের পর বুধবারও থমথমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। রাতভর অরবিন্দ ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছিলেন পড়ুয়ারা। রাত পেরিয়ে সকাল হলেও অবস্থান ওঠেনি। সঙ্গে চলছে ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি। বুধবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ডিএসএফ-সহ কয়েকটি অতিবাম ছাত্র সংগঠন। সারা দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ এবং গবেষণাগার (ল্যাবরেটরি) বন্ধ রাখার ডাক দেওয়া হয়েছে।

সোম ও মঙ্গলবারের জিবি বৈঠকের পর ছাত্রদের তরফে বেশ কয়েকটি দাবি উঠে এসেছে। ছাত্রদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, বুধবার বিকেল ৪টের মধ্যে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পাশাপাশি, আহত ছাত্রদের চিকিৎসার খরচও বহন করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেই। যে সমস্ত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা উপাচার্যকে সরকারের সঙ্গে কথা বলে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্টো দিকে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে ছাত্রছাত্রীদের উপর দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ দায়ের করার ব্যবস্থাও করতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি উপাচার্য ক্যাম্পাসে না আসেন, তা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রেরা। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা। এমনই নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তিন ফ্যাকাল্টির পড়ুয়াদের সম্মিলিত জিবি বৈঠকে। ক্যাম্পাসে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে জন্য শীঘ্রই একটি গণ কনভেনশনেরও ডাক দিতে চলেছেন পড়ুয়ারা।

গত শনিবার যাদবপুরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। তাঁকে ঘিরে যখন বিক্ষোভ চলছে, সেই সময় মন্ত্রী আহত হন বলে অভিযোগ। জখম হন শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো দুই পড়ুয়াও। অভিযোগ, দুই পড়ুয়ার মধ্যে এক জনকে চাপা দিয়েছে মন্ত্রীর গাড়ি। অন্য জনের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে। সেই থেকেই উত্তাল যাদবপুর। তবে পড়ুয়ারা সময়সীমা বেঁধে দিলেও মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি উপাচার্য। সূত্রের খবর, তিনি এই মুহূর্তে অসুস্থ। এখনও তাঁর রক্তচাপ ওঠানামা করছে। অসুস্থতার কারণে বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। তবে বাড়ি থেকেই খোঁজখবর রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পরে শনিবার রাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। উপাচার্যের পরনে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন উপাচার্য। মঙ্গলবার ভাস্কর বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। ডাক্তার আমাকে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলেছেন। তাই ডাক্তার পরামর্শ দিলেই আমি পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব।’’ পড়ুয়াদের হুঁশিয়ারির পর বুধবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান কি না, সে নিয়ে জল্পনা চলছে।


আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement