মৃত্যুর জেরে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পরের পর ট্রাক।ছবি: শুভ্র মিত্র।
বালির ট্রাকের ধাক্কায় আহত স্কুলছাত্রকে চাকার তলা থেকে উদ্ধার করেও হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলেন না পরিজনেরা। খবর দেওয়া হলেও সংকীর্ণ রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে সারি সারি বালির ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় গ্রামে ঢুকতে পারেনি অ্যাম্বুল্যান্স। গ্রামের আটচালাতেই মৃত্যু হয় বাঁকুড়ার জয়পুরের পানখাউলি গ্রামের সৌরভ মণ্ডলের (১৩)। শুক্রবার রাতের ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত জনতা ন’টি বালির ট্রাকে আগুন লাগায়।
পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়ে পুলিশও। তাদের লক্ষ করে ছোড়া হয় ইট-পাটকেল। পরে গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটানো ট্রাকের চালকের খোঁজ চলছে।’’
মাস তিনেক আগে স্থানীয় চণ্ডীপুরে একটি বালি-খাদান চালু হয়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, তার পর থেকে রাত-দিন গ্রামের সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে কয়েকশো বালির ট্রাক যাতায়াত করছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে দিন কাটে তাঁদের। ওই রাস্তার পাশেই চণ্ডীপুর রামকৃষ্ণ ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র সৌরভের বাড়ি। শুক্রবার রাতে বাড়িতে একটি বাল্বের ‘ফিউজ’ উড়ে যাওয়ায়, সে বেরিয়েছিল বাল্ব কিনতে। রাস্তা পেরোতে যেতেই বালি বোঝাই একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা মারে।
দুর্ঘটনায় মৃত সৌরভ মণ্ডল।ছবি: শুভ্র মিত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী ভুবনেশ্বর দে বলেন, ‘‘ট্রাকটার পিছনের দু’টো চাকার ফাঁকে আটকে ছেলেটা গোঙাচ্ছিল! ট্রাক ফেলে চালক পালায়।’’ তাঁর কাছ থেকে খবর পেয়ে সৌরভের সম্পর্কিত দাদা সোমনাথ মণ্ডল, তোতন মণ্ডলেরা এসে সৌরভকে টেনে বার করে পাশের আটচালায় নিয়ে যান। তাঁরা বলেন, ‘‘ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করি। কিন্তু রাস্তায় এত বালির ট্রাক ছিল যে অ্যাম্বুল্যান্স আট কিলোমিটার দূরে চাতড়া মোড়ে আটকে যায়।’’ তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘ভাইকে মোটরবাইকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো ফাঁকও রাস্তায় ছিল না। চোখের সামনে ভাইটা চলে গেল!’’ এর পরেই উত্তেজিত জনতা ট্রাক ভাঙচুর করে।
গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, পানখাউলি গ্রামের রাস্তা খুব সরু হলেও প্রশাসন সেই রাস্তা দিয়ে বালি খাদানের ট্রাক চলাচলের অনুমতি দিল কী ভাবে!
জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘সব দিক দেখেই খাদানের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নেওয়া হবে।’’ বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর আশ্বাস, ‘‘ওই রাস্তা সংস্কার করা হবে। লোকালয় এড়িয়ে খাদানে যাওয়ার অন্য রাস্তা বার করা যায় কি না, তা-ও দেখছি।’’
সৌরভের মা অন্নপূর্ণা মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘সরকার আগেই এ সব করলে এ দিন দেখতে হতো না!’’