পাহাড়েশ্বরের উদ্যানের উদ্বোধনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আছেন বোলপুরের সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। দুবরাজপুরে। ছবি: সংগৃহীত
দুবরাজপুর পুর এলাকায় ‘সামান্য’ একটি উদ্যানের উদ্বোধন। সেখানে কি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আসবেন? সংশয় ছিল দলের নেতাদের মধ্যেই। কিন্তু সেই সংশয়কে ভুল প্রমাণ করে ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল উদ্যান ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে তৈরি স্মারক উদ্বোধনে দুবরাজপুরে এসেছিলেন তিনি।
কারণ, পার্কটি ছিল মামা-ভাগ্নে খ্যাত দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরে। যেখানে শুটিং করে গিয়েছেন— সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেন। সেখানেই পার্কের উদ্বোধন, এটা শোনার পরে আদ্যন্ত সংস্কৃতিমনস্ক মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। বলছিলেন দুবরাজপুরের তৎকালীন পুরপ্রধান মধুসূদন কুণ্ডু।
সে বারই ছিল পুর নির্বাচন। তার আগে একগুচ্ছ উদ্বোধন ও একটি ক্রীড়া ময়দানের শিলান্যাসের জন্য মন্ত্রীদের চাইছিল বাম পরিচালিত পুরসভার। আর ‘ইচ্ছে’ ছিল, পাহাড়েশ্বরের উদ্যান ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মারক যেন উদ্বোধন হয় বুদ্ধদেবের হাতে। কিন্তু উদ্বোধকের নামের তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর নাম দেখে জেলা কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ সংশয়ে ছিলেন। হাল ছাড়েননি মধুসূদন। তিনি চেয়েছিলেন বার্তাটুকু অন্তত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছক।
অনেক অনুনয়ের পরে তৎকালীন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। মধুসূদন বলেন, ‘‘পরের দিন জেলা কার্যালয়ে বসে আছি। তখন সেলিমদাকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেলিমদা বলার চেষ্টা করছিলেন, দুবরাজপুরের পাহাড়েশ্বরে একটি পার্কের... তাঁকে কার্যত থামিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন উঠেন, ‘‘আমি জানি পাহাড়েশ্বরের কথা, ওখানে সত্যজিৎ রায় ও মৃণাল সেন সিনেমার শুটিং করেছেন। আমার ইচ্ছে ওখানে এক বার ঘুরে আসি।’’
পাহাড়েশ্বরেই মৃণালের ‘মৃগয়া’, সত্যজিতের ‘অভিযান’-এর শুটিং হয়েছে। উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করে জানিয়ে দিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। মধুসূদনের দাবি, এসে খুব খুশি হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকালে খবরটা পাওয়া ইস্তক মনকে সান্ত্বনা দিতে পারছি না। আক্ষেপ, বর্তমান পুরবোর্ড উদ্বোধনের ফলকই আর রাখেনি।’’ যদিও বর্তমান পুরপ্রধান পীযূষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘উনি ঠিক বলছেন না। সব ফলকই আছে।’’