নির্দেশ সত্ত্বেও এমপিএসে তালা ঝোলাতে দেরি

কলকাতা হাইকোর্ট সোমবার নির্দেশ দিয়েছিল, কাজ শেষ করতে হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন তথা পুলিশের তরফে অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএসের অফিস বন্ধ করার কাজ শুরুই করা হল বুধবার। মাঝখানে মঙ্গলবার গোটা একটা দিন পুলিশ যে শুধু হাত গুটিয়ে রইল তা-ই নয়। ওই দিন কলকাতা, ঝাড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল লগ্নি সংস্থাটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

তালা লাগানো হচ্ছে ঝাড়গ্রামের এমপিএস অফিসে। বুধবার দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কলকাতা হাইকোর্ট সোমবার নির্দেশ দিয়েছিল, কাজ শেষ করতে হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন তথা পুলিশের তরফে অর্থ লগ্নি সংস্থা এমপিএসের অফিস বন্ধ করার কাজ শুরুই করা হল বুধবার। মাঝখানে মঙ্গলবার গোটা একটা দিন পুলিশ যে শুধু হাত গুটিয়ে রইল তা-ই নয়। ওই দিন কলকাতা, ঝাড়গ্রাম-সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল লগ্নি সংস্থাটি।

Advertisement

অথচ লেক টাউন, ঝাড়গ্রাম-সহ সর্বত্র ওই সংস্থার সব অফিসে তালা ঝোলানোর জন্য বিচারপতি সৌমিত্র পাল সোমবার রাজ্য পুলিশের ডিজিকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ঝাঁপ ফেলার কাজে নামতে এত দেরি হল কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে। পুলিশ জানাচ্ছে, কোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি সময়মতো না-পৌঁছনোয় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। যদিও কলকাতায় বসে বিচারপতি নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও মহানগরীরই একাংশে এমপিএসের অফিস বন্ধ করতে দেড় দিন দেরি হল কেন, তার সদুত্তর মিলছে না।

কলকাতা, ঝাড়গ্রাম-সহ সারা রাজ্যে এমপিএসের তিনশোরও বেশি অফিস আছে। বুধবার লেক টাউনে এমপিএসের সাতটি অফিসে যায় বিধাননগর পুলির। সেখানকার ‘বি’ ব্লকেই সংস্থার ওই সব দফতর ও প্রধান কার্যালয়। পুলিশ জানায়, কোর্টের নির্দেশের পরেও মঙ্গলবার লেক টাউনে এমপিএসের সব অফিসে কাজ হয়েছে। তবে এ দিন কর্মীদের দেখা মেলেনি। সকালে বিধাননগর পুলিশ ওই সব অফিস গিয়ে দেখে, সেখানে শুধু নিরাপত্তারক্ষীরা রয়েছেন। তাঁদের সামনেই ওই অফিসগুলি সিল করে দেওয়া হয়। বিধানগরের এডিসিপি দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছি। ওই সব অফিস সিল করা হয়েছে।’’ রায়গঞ্জের উকিলপাড়াতেও বন্ধ করা হয়েছে ওই সংস্থার একটি অফিস।

Advertisement

এ দিন ঝাড়গ্রামের দিঘিশোলে এমপিএসের এক নম্বর বাণিজ্যিক ভবনটিও সিল করে দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিওয় তুলে রাখে পুলিশ। ঝাড়গ্রামের এএসপি (সদর) অজিত সিংহ যাদব বলেন, “এমপিএসের অফিস সিল করা হয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশেই।” পুলিশ জানাচ্ছে, ওখানেও সোম ও মঙ্গলবার সংস্থার কৃষি খামার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগ ও মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্টে কাজ করেন কর্মীরা।

আদালতের নির্দেশে লেক টাউনের এমপিএস অফিসে তালা লাগাচ্ছে বিধাননগর পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

দিঘিশোলে এমপিএসের প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত অফিসার তপনকুমার দাস বলেন, “সংস্থার কৃষি খামার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগ, মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্ট, ট্যুরিস্ট রিসর্ট খোলা রয়েছে। এ দিনও কাজ হয়েছে।’’ তিনি জানান, তাঁদের এক নম্বর বাণিজ্যিক ভবনটি সিল করেছে পুলিশ। সেখানে অফিস আছে। দু’নম্বর বাণিজ্যিক ভবনে কর্মীরা থাকেন। সেখানে অফিস নেই। এমপিএসের সহযোগী তিনটি সংস্থা এ দিনই হাইকোর্টে একটি মামলা করে জানায়, আদালত এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেডের সব অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশে বলা নেই যে, এমপিএসের অন্য সব সংস্থার কার্যালয়ও বন্ধ করতে হবে। অন্যান্য সংস্থায় কর্মী আছেন এক হাজারেরও বেশি। এমপিএসের সব সংস্থার অফিস বন্ধ হলে তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এমপিএসের সহযোগী সংস্থাগুলির কার্যালয় যাতে বন্ধ করা না-হয়, সেই ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে‌।

এমপিএস সংস্থায় টাকা রেখে তা ফেরত না পেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছেন ভাস্কর দাশগুপ্ত নামে এক আমানতকারী। তাঁর আইনজীবী অরিন্দম দাস অভিযোগ করেন, এমপিএস গ্রিনারি ডেভেলপার্স লিমিটেড বাজার থেকে টাকা তুলে নিজেদেরই অন্য সংস্থায় অবৈধ ভাবে তা সরিয়েছে। এ দিন হাইকোর্টে যে-মামলা দায়ের হয়েছে, তার শুনানিতে ওই তথ্য দাখিল করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement