কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র
আড়াই ঘণ্টা শুনানির পর আপাতত বিরতি প্রধান বিচারপতির এজলাসে। আবার দুপুর আড়াইটে থেকে শুনানি।
প্রতিদিন মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য মাত্র ৪ ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অভিযোগ করেছিলেন মামলাকারীরা। তাতে মনোনয়ন জমা দিতে অসুবিধা হচ্ছে। রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টে দিনে ২ হাজার মামলা দায়ের হয়। তা বলে কি ২ হাজার মামলার শুনানি হয়?’’ এর আগে অবশ্য কমিশনও আদালতকে জানিয়েছে, চার ঘণ্টা সময় থাকলেও দরজা বন্ধ হচ্ছে না। দুপুর ৩টের মধ্যে যদি কোনও প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে ঢোকেন তবে তিনি মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন।
মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। রাজ্য জানিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে বিডিও অফিসে একটি টেবিলে মনোনয়ন নেওয়া হয় না। অনেক টেবিল রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন একেবারে আলাদা। তার মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ অন্য জায়গায় হয়।
রাজ্যের বক্তব্য, মনোনয়নপত্র পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে না। এটা ঠিক না। একটিও উদাহরণ নেই যে, মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে ফিরে এসেছেন বা মনোনয়ন দিতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে ২০ হাজার মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে কল্যাণ বলেন, ‘‘ওরা বলছে ২০ হাজার মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেননি। সুপ্রিম কোর্টও বলেছে ইলেকশন পিটিশন দায়ের করতে। অথচ আজ পর্যন্ত একটি মামলাও দায়ের হয়নি। কেন ধর্মাবতার? শুধু ২০ হাজার, ২০ হাজার বলে চিৎকার করলে হবে! ওরা শুধু সব এনার্জি জমিয়ে রেখেছে আদালতের জন্য।’’
নির্বাচন কমিশনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে যেখানে আলোচনা হচ্ছে, সেখানে রাজ্যের আইনজীবী কথা বলছেন কেন, তা নিয়ে প্রধান বিচারপতির এজলাসে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতিকে বললেন, ‘‘আমাকে আরও বলতে দিন।’’ বিরোধীদের এক একটি অভিযোগ নিয়ে আদালতে রাজ্যের তরফে পাল্টা যুক্তি দিলেন কল্যাণ।
বিরোধীরা পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রধান বিচারপতিও রাজ্যের কৌঁসুলি কল্যাণের কাছে জানতে চাইলেন, ভোট ঘোষণায় রাজ্যের ভূমিকা কী? জবাবে কল্যাণ বললেন, ‘‘রাজ্য ভোটের দিন ঠিক করে।’’ কল্যাণের সংযোজন, ‘‘রাজ্য সহযোগিতা করছে কি না, তা নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে। এ নিয়ে তারা তাদের বক্তব্য জানাতে পারে। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল এ নিয়ে কথা বলতে পারে না। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলিকে সন্তুষ্ট করা যাবে না।’’
মনোনয়নের সময় নিয়ে প্রধান বিচারপতির এজলাসে জারি বাদানুবাদ।
কল্যাণ বললেন, গত বার ২ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কমিশন । ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ছিল। তখনও ৭ দিন সময় ছিল।
জবাবে প্রধান বিচারপতি বললেন, এ বার ৯ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দিলেও মাঝে ১১ জুন ছুটির দিন ছিল। ওই দিন মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
মনোনয়নের সময় নিয়ে রাজ্য কেন যুক্তি বা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মামলাকারীরা। কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী জানতে চাইলেন, ‘‘রাজ্য এ সব কেন বলছে? যা বলার নির্বাচন কমিশনই তো এ নিয়ে বলবে।’’
প্রধান বিচারপতি পঞ্চায়েত ভোটের দিন পিছনোর পরামর্শ দিতে, তার পাল্টা যুক্তি দিলেন রাজ্য়ের কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৯ জুন কোন দলের কত মনোনয়ন জমা পড়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে কল্যাণ বলেন, ‘‘৪ হাজারের বেশি মনোনয়ন জমা দিয়েছে বিজেপি। সময় কম হলে কী করে জমা পড়ল?’’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য উদ্ধৃত করে কল্যাণ বলেন, ‘‘ভারত গণতন্ত্রের মহাসমুদ্র। কমিশনের কাজ নিয়ে কোনও অভিযোগ হয় না। এই অবস্থায় ভোটের দিন পিছনোর কী কারণ থাকতে পারে?’’