সারদা-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হিসেবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর থাকার কথা জেলে।
কিন্তু রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী সেই মদন মিত্র বন্দি অবস্থায় টানা ছ’মাস এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কেন, তদন্তকারী সিবিআই বারবার তা জানতে চেয়েছে। এ ব্যাপারে তারা চিঠি-চাপাটিও করেছে। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল-কর্তৃপক্ষ অবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যুরোর চিঠির জবাব দিয়েছেন। তাতে সিওপিডি, স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অবসাদের মতো মন্ত্রীর শরীর ও মনের ‘হরেক অসুস্থতা’র উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে, ওই কারণেই এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ মদনবাবুকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। ফলে ওঁকে জেলে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হচ্ছে না বলে যুক্তি দিয়েছেন কারা-কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরে দিন পনেরো আলিপুর জেলে কাটিয়ে মদনবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। সপ্তাহ দুয়েক বাদে তিনি জেলে ফিরলেও বেশি দিন থাকেননি। চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি মদনবাবুকে ফের এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আর সেই ইস্তক রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি সরকারি হাসপাতালটির ওই ‘অভিজাত’ ওয়ার্ডই পরিবহণমন্ত্রীর ঠিকানা। মাসখানেক আগে শুধু কেবিন বদলেছে— ২০ নম্বরের জায়গায় হয়েছে সাড়ে ১২ নম্বর।
দুর্নীতি-মামলায় গ্রেফতার হওয়া মন্ত্রীর মাসের পর মাস হাসপাতালবাস ঘিরে বিরোধীরা তো সরব হয়েইছে, এমনকী খোদ শাসকদলের মধ্যেও গুঞ্জন কম হয়নি। পরোক্ষে প্রায় একই প্রশ্ন তুলেছে সিবিআই। গত ৬ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টে মন্ত্রীর জামিন-আর্জির শুনানিতে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি কে রাঘবাচারুলু অভিযোগ করেন, সারদা-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত পরিবহণমন্ত্রী উডবার্ন ওয়ার্ডের একটি কেবিন আটকে বসে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধে ভোগ করছেন। বিচারপতি নিশীথা মাত্রে তখন জানতে চেয়েছিলেন, মদনবাবুর কী হয়েছে? উত্তরে রাঘবাচারুলু কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘কেউ জানে না। রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত।’’
অন্য দিকে মদনবাবুর কৌঁসুলি কপিল সিব্বল তাঁর মক্কেলের অসুস্থতার প্রমাণ হিসেবে হাসপাতালের দেওয়া মেডিক্যাল রিপোর্ট পেশ করেন আদালতে। তোলেন পাল্টা প্রশ্নও— ‘‘ওঁর কোনও রোগ না হয়ে থাকলে সিবিআই-ই বা কেন কোর্টকে বলছে না যে, ওঁকে (মদনবাবুকে) জেলে ফেরত পাঠানো হোক?’’
সে দিন অবশ্য হাইকোর্টে পরিবহণমন্ত্রীর জামিন-আর্জি খারিজ হয়ে যায়। আর তার পরেই আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের কাছে চিঠি পাঠায় সিবিআই। তাতে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়, মদনবাবু ঠিক কী কী সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা কী রকম ইত্যাদি।
গত ১৩ অগস্ট সেই চিঠিরই উত্তর দিয়েছেন জেল-কর্তৃপক্ষ। কী রয়েছে তাতেয
জেলের চিঠিতে বলা হয়েছে, সিওপিডি, স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে শুরু করে মানসিক অবসাদজনিত নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন মদন মিত্র। চিঠিতে জেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: গত ১১ ফেব্রুয়ারি মদনবাবুর শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা দেখা দিলে তাঁকে প্রথমে জেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ভর্তি করা হয় এসএসকেএমে। তাঁর জন্য এসএসকেএমে ডাক্তারদের বোর্ড গড়া হয়েছে। বোর্ডের মতে, মন্ত্রী ভুগছেন মূলত সাতটি জটিল সমস্যায়— হাইপারটেনশন, টাইপ-টু ডায়াবেটিক মেলাইটিস, ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি (স্টেজ থ্রি), সিওপিডি, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারট্রপি এবং মানসিক অবসাদ।
এখন উনি কেমন আছেন?
এসএসকেএমের ডাক্তারদের বক্তব্যের ভিত্তিতে জেলের দাবি: মন্ত্রী এখনও শ্বাসকষ্ট, মানসিক নানা সমস্যা ও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন। সোমবার হাসপাতাল-সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে মদনবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। জ্বরের ঘোরে তিনি ভুল বকতে থাকেন, এমনকী নিকটাত্মীয়দের চিনতে পারছিলেন না। শ্বাসকষ্টও ছিল। তাঁকে আইটিইউয়ে ভর্তি করতে হয়। দিন তিনেক সেখানে রেখে ফের উডবার্নে নিয়ে আসা হয়েছে।
কিন্তু এমতাবস্থায় ওঁকে কোনও ভাবেই হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে জেলে ফেরানো সম্ভব নয় বলে সিবিআই’কে জানিয়েছেন আলিপুর জেল-কর্তৃপক্ষ। সিবিআই-সূত্রের খবর, মদন মিত্রের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাসপাতালের দেওয়া রিপোর্টের সঙ্গে এ বার জেলের যুক্তি মিলিয়ে দেখবেন তদন্তকারীরা।