স্বেচ্ছাবসরের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল এসএসকেএম হাসপাতালের অপসারিত অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রকে।
এসএসকেএম হাসপাতালে কুকুর-কাণ্ডের জেরে প্রদীপবাবুকে বদলি করা হয়েছিল সাগর দত্ত হাসপাতালে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু পদে যেতে চাননি তিনি। উল্টে স্বেচ্ছাবসরের চিঠি জমা দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ভবনে। সেই আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার প্রদীপবাবুকে পাঠানো হল কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে। তবে এসএসকেএম হাসপাতালের অপসারিত অধিকর্তা জানিয়েছেন, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের কোনও নির্দেশ তিনি হাতে পাননি। প্রদীপবাবু বলেছেন, ‘‘সম্মানের সঙ্গে সরকারি চাকরিটাই করতে চেয়েছি বরাবর। যোগ্য সম্মান পেলে ফের সেটা করতে প্রস্তুত আছি।’’
শুধু কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠানোই নয়, স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর— তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তের যে অভিযোগ প্রদীপবাবু তুলেছেন, তার জন্য বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বদলি করার জন্য নবান্ন এবং স্বাস্থ্য ভবনকে দায়ী করায় এসএসকেএম হাসপাতালের অপসারিত অধিকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও আনা হচ্ছে। প্রদীপবাবুর বদলিকে মঙ্গলবার রুটিন বদলি বলে মন্তব্য করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। এ দিন একই সঙ্গে বিভিন্ন হাসপাতালের সুপার, সহকারি সুপার-সহ আরও বেশ কয়েক জনকে বদলিকরে স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দিল, প্রদীপবাবুর বদলিটাও এই প্রক্রিয়ারই অঙ্গ।
এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালের সহকারি সুপার অনির্বাণ ঘোষালকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে এম আর বাঙুর হাসপাতালের সহকারি সুপার সেবন্তী মুখোপাধ্যায়কে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রদীপবাবুর পর এসএসকেএমে আরও বেশ কয়েক জনকে অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পর পর এমন বদলির জেরে রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এসএসকেএমে। দিনভর বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মীদের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। এর আগে যখন অন্যায় ভাবে অরুণ সিংহকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন কেন প্রদীপবাবু নীরব ছিলেন, সেই প্রসঙ্গ তুলে সমালোচনাও করেছেন অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা তিনিও কিছু কম করেননি। এখন তাঁর নিজের ওপরে শাস্তির খাঁড়া নেমে আসায় তিনি বিদ্রোহ করছেন।
এসএসকেএম হাসপাতালের নতুন অধিকর্তা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন।
কিন্তু ওই বিভাগীয় প্রধানদের অনেকেই খোলাখুলি ভাবে তাঁদের বক্তব্য জানাতে পারেননি বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘সবাই এখন জল মাপতে চাইছেন। কোন কথা কী ভাবে নবান্ন কিংবা কালীঘাটে চলে যাবে কেউ বুঝতে পারছেন না। সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ প্রদীপ মিত্ররই যদি এরকম হাল হয়, তবে অন্যদের ক্ষেত্রে যে কী হবে তা নিয়ে জোর অলোচনা চলছে বিভিন্ন বিভাগে।’’ এর পরে নেফ্রোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অর্পিতা রায়চৌধুরীর উপরে বদলির খাঁড়া নেমে আসবে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
প্রদীপ মিত্র সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্ব নিতে না চাওয়ায় সেখানে কে অধ্যক্ষ হিসেবে যাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এ দিন স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দিয়েছে, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়কে
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়ে আসা হবে। আর তার পরিবর্তে প্রদীপ কুণ্ডুকে মালদহ মেডিক্যালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করা হবে।
এ দিন সকাল থেকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের দিন কেটেছে উদ্বেগ আর আশঙ্কায়। অভিভাবকহীন একটি কলেজে তাঁদের ভবিষ্যৎ ঠিক কী হতে চলেছে, সময় কেটে গিয়েছে সেই আলোচনায়। বিকেলে স্বাস্থ্য ভবনের সিদ্ধান্ত জানার পরে অবশ্য কিছুটা স্বস্তির ছবি চোখে পড়েছে সেখানে।