বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি মামলায় রায় দেওয়ার পর দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) মামলায় ২৬ হাজার (প্রকৃতপক্ষে ২৫,৭৫২) জনের চাকরি বাতিল করে আবার নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া কী ভাবে হবে? কারা আবেদন করতে পারবেন আর কারা পারবেন না? এ রকম নানা প্রশ্ন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শীর্ষ আদালতের রায় কী বলছে?
রায়ে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছিলেন বলে যাঁরা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত, তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার যে নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্ট দিয়েছে, তাতে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। ওই চাকরিপ্রার্থীদের বেতনও ফেরত দিতে হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রায়ে। কিন্তু প্রায় ২৬ হাজার জনের মধ্যে অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীই যোগ্য বা অযোগ্য বলে এখনও চিহ্নিত নন। শুধুমাত্র নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম হওয়ায় তাঁদের চাকরিও বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বক্তব্য, যাঁরা যোগ্য বা অযোগ্য বলে চিহ্নিত নন, তাঁরা সকলেই নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বয়সে ছাড়ের কথাও রায়ের প্রতিলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, ‘‘আমাদের মতে, এটাই ন্যায্য। এটাই হওয়া উচিত। এতে তাঁরা আবার নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন।’’
প্রশ্ন উঠেছে, নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কি নতুন চাকরিপ্রার্থীরাও যোগ দিতে পারবেন? সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিলিপিতে অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। পরে প্রশ্নটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি মামলায় রায় দেওয়ার পর দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়ের প্রতিলিপি থেকে নির্দিষ্ট কিছু অংশ পড়ে শুনিয়ে তিনি জানিয়েছেন, বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা থাকলেও এই রায় তিনি মানতে পারছেন না। সাংবাদিক বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, নতুন চাকরিপ্রার্থীরাও নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে পারবেন কি না। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘২৫ হাজারের কেস তো এটা? এটা তো আলাদা কেস। কোর্টের নির্দেশও ২৫ হাজারের উপর নির্ভর করে। আমরা তো কোনও শূন্য পদের কথা কোথাও বলিনি। আমরা যখন বিজ্ঞপ্তি জারি করব, তখন জানতে পারবেন।’’
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
কিন্তু কী ভাবে হবে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া? এই সময়ের মধ্যে তা কি সম্পূর্ণ হবে? মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা তিন মাসের মধ্যেই করে দেব।’’ এ ব্যাপারে এসএসসি-র সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। নাম না-প্রকাশ করার শর্তে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের সঙ্গেও আমরা কথা বলব। তার পরেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামিকাল (শুক্রবার) দুপুর ১টা নাগাদ এসএসসির তরফে এই বিষয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
চাকরি হারানো প্রায় ২৬ হাজার জনের মধ্যে অনেকেই আগে অন্য সরকারি চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এসএসসির চাকরিতে যোগদান করেছিলেন তাঁরা। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, যাঁরা অযোগ্য বলে চিহ্নিত নন, তাঁরা তাঁদের আগের কাজের জায়গায় ফিরে যেতে পারেন। এর জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করতে পারেন। সরকারকেও তিন মাসের মধ্যে সেই আবেদনের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করতে হবে। যে ক’বছর তাঁরা এসএসসির চাকরি করেছেন, সেই সময়কে ‘সার্ভিস ব্রেক’ হিসাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। যাঁরা পুরনো কাজের জায়গায় ফিরে যাবেন, তাঁদেরও বেতনবৃদ্ধি করা যেতে পারে। পেতে পারেন অন্যান্য সুযোগসুবিধাও। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে রাজ্য সরকার অতিরিক্ত পদও তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
ভ্রম সংশোধন: এই খবরটি প্রথম প্রকাশের সময়ে লেখা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছে আদালত। কিন্তু এই তিন মাসের সময়সীমা সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আদালতের রায়ের প্রতিলিপিতে লেখা হয়েছে, চাকরিহারা যে প্রার্থীরা আগে কোনও সরকারি দফতরে বা সরকার পোষিত দফতরে চাকরি করতেন, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরকে তাঁদের চাকরি ফেরত দিতে হবে। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।