দলে বয়স-নীতি কার্যকর করে এ বার রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা সূর্যকান্ত মিশ্রের।
ফাইল চিত্র।
রাত পোহালে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। কেরল, ত্রিপুরার মতো বাম রাজনীতির নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে দলের শীর্ষ পদে বদল হয়নি। কিন্তু বাংলায় পরিবর্তন আসন্ন। সিপিএম সূত্রের খবর, নতুন রাজ্য সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। পরিচিতির বিচারে তাঁর তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকলেও সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে রয়েছেন পলিটবুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম।
দলে বয়স-নীতি কার্যকর করে এ বার রাজ্য সম্মেলনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার কথা সূর্যকান্ত মিশ্রের। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা যে হেতু ৭৫ বছর, তাই আগামী মাসে পার্টি কংগ্রেসে তিনি দলের পলিটবুরোয় থেকে যেতে পারেন। নতুন রাজ্য সম্পাদক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে দলের প্রথম সারির নেতৃত্বের মতামত সিপিএমের সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বিচারেই শ্রীদীপবাবু নতুন দায়িত্ব পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা। পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্ট চূড়ান্ত করার জন্য সিপিএমের দু’দিনের পলিটবুরো বৈঠক বসেছিল শনি ও রবিবার। সেই বৈঠকের অবসরেও বাংলার বিষয়ে কথা হয়েছে। সামগ্রিক ভাবে যা পরিস্থিতি, তাতে শ্রীদীপবাবুর পাল্লাই ভারী। তবে বাংলায় সংগঠনের হালে পলিটবুরোর মত উদ্বেগ ও সমালোচনামূলক। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রিপোর্ট আগামী ২৫-২৭ মার্চ বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে পেশ করা হবে অনুমোদনের জন্য।
কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ১৫ থেকে ১৭ মার্চ চলবে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন। দলের প্রয়াত দুই নেতা নিরুপম সেন ও শ্যামল চক্রবর্তীর নামে সম্মেলন-স্থল ও মঞ্চের নামকরণ হচ্ছে। বয়স-নীতি এবং সাংগঠনিক সক্রিয়তার মাপকাঠিতে এ বার নতুন রাজ্য কমিটি থেকে বেশ কিছু পুরনো মুখের বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা। রদবদলের এই প্রক্রিয়ায় নজরদারি করতে রাজ্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার, বৃন্দা কারাট, হান্নান মোল্লা, নীলোৎপল বসুর মতো পলিটবুরো সদস্যদের বড় অংশের। কমিটি গঠন ঘিরে টানাপড়েন ভোট পর্যন্ত পৌঁছক, সিপিএমের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতৃত্ব কেউই তা চান না।
গত পাঁচ দশকে প্রমোদ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে সরোজ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন দাশগুপ্ত, অনিল বিশ্বাস বা বিমান বসুরা যখন রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন, তখন তাঁরা শুধু সিপিএমের অন্দরে নয়, রাজ্য রাজনীতিতেও প্রতিষ্ঠিত নেতা ছিলেন। শিবপুর বি ই কলেজের প্রাক্তনী শ্রীদীপবাবু এক সময়ে সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক ছিলেন ঠিকই কিন্তু রাজনীতির বৃহত্তর ময়দানে তাঁর তেমন পরিচিতি নেই। নতুন প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে দিয়ে সিপিএম এখন কঠিন লড়াই লড়ছে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিজেপি এ রাজ্যে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়লেও পাঁচ রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনের পরে তারা আবার গা-ঝাড়া দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তুলনায় স্বল্প পরিচিত শীর্ষ নেতাকে সামনে রেখে লড়াইয়ে সুবিধা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান দলেরই একাংশ। সচরাচর বাংলায় যাঁরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হন, তাঁরা দলের পলিটবুরোয় থাকেন। সেই দিক থেকে প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন সাংসদ সেলিমই এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিধানসভা ভোটের সময়ে আইএসএফ-সহ গোটা জোট প্রক্রিয়া এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক আছে।
দলের কেউ কেউ অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিশাখাপত্তনমে ২০১৫ সালের পার্টি কংগ্রেসে পলিটবুরোয় কারাটই ছিলেন পাল্লায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাজিমাত করে সাধারণ সম্পাদক হয়ে গিয়েছিলেন ইয়েচুরি। এ বার রাজ্য সম্মেলনেও কি তেমন কিছু হতে পারে? দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘সম্মেলন-কক্ষে বিরাট কোনও চ্যালেঞ্জ না হলে দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে।’’