— প্রতীকী চিত্র।
হাতে রয়েছে একটি বছর। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ছ’টি বিধানসভা উপনির্বাচনের হারে অশনি সঙ্কেত দেখছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলীয় বিশ্লেষণ— পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে আগামী বিধানসভায় ক্ষমতা দখল তো দূরে থাক, দল পশ্চিমবঙ্গে ৫০টি আসন জিততে পারবে কি না সন্দেহ!
বিজেপি নেতৃত্ব মেনে নিচ্ছেন, অনেক সময় উপনির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীরাই জয়ী হন। উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানে অধিকাংশ আসনে জিতেছে শাসক দল বিজেপি। কিন্তু বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি, সেখানে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বা আর জি কর কাণ্ডের ঘটনায় শাসক শিবিরের প্রতি মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নিদেনপক্ষে তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দেবে বিজেপি, এমনটাই আশা করেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু অধিকাংশ আসনেই বড় ব্যবধানে দ্বিতীয় হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। হাতছাড়া হয়েছে জেতা আসন মাদারিহাট।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, সার্বিক ভাবে ছন্নছাড়া দশা রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের। যার প্রভাব পড়েছে নিচুস্তরের বুথকর্মীদের উপরে। বুথকর্মীদের মধ্যে নিষ্ঠা, আন্তরিকতার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তৃণমূলকে যে হারানো সম্ভব, ধারাবাহিক পরাজয়ের কারণে সেই বিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলেছেন বুথকর্মীরা। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় স্তরের নেতার কথায়, ‘‘দলের সম্পদ বুথ স্তরের কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে তাঁরা দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারছেন না। পশ্চিমবঙ্গে এখনও সব বুথে বুথ কমিটি তৈরি হয়নি। সাংগঠনিক ব্যর্থতা এর জন্য দায়ী।’’ পাশাপাশি, তাঁদের মতে, শাসক দলের হাতে অত্যাচারিত কর্মীদের পাশে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াতে না পারায় বহু কর্মী বসে গিয়েছেন। মাদারিহাটের মতো বিজেপির জেতা আসনে তৃণমূলের জয় স্পষ্ট করে দিয়েছে, গেরুয়া শিবিরের শক্ত ঘাঁটি উত্তরবঙ্গেও প্রভাব বাড়ছে তৃণমূলের। যা বিজেপির কাছে যথেষ্টআশঙ্কার কারণ।
রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নিচুতলা তো দূরস্থান, মাঝারি স্তরের নেতা-কর্মীদের যোগাযোগের ঘাটতি রয়েছে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, সাংসদ-বিধায়কদের নিজেদের এলাকায় সময় না দেওয়া,সংগঠনকে শক্তিশালী করার উপরে জোর না দেওয়া খারাপ ফলের বড় কারণ। তা ছাড়া, দলীয় নেতৃত্বের প্রকাশ্য অন্তর্দ্বন্দ্ব সংগঠনের ভিতকে দুর্বল করছে। তা ছাড়া, তৃণমূলের মতো দলকে হারাতে যে সাংগঠনিক কুশলতা, দক্ষতা, পরিকল্পনা প্রয়োজন, তার ঘাটতি রয়েছে বলেই মনে করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের একাধিক সাংসদ অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বসে কৌশল ঠিক করতে চাইলেও, রাজ্যনেতৃত্ব তাঁদের সময় দেন না। এ ধরনের দূরত্ব ক্ষতিকর।’’
আবার রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গের প্রশ্নে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের গা-ছাড়া মনোভাব গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে। অতীতে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা যে ভাবে বাংলা দখলে উদ্গ্রীব ছিলেন, সেই উদ্যমে যে ঘাটতি পড়েছে, তা ঘরোয়া ভাবে মেনেনিচ্ছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। জনমানসে প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা পরিবর্তন আদৌ চান না কি তৃণমূলের শাসনে পশ্চিমবঙ্গে ‘হিন্দুদের দুর্দশার’ ছবি দেখিয়ে অন্য রাজ্যে মেরুকরণই কেন্দ্রীয় বিজেপির আসললক্ষ্য? দলকে আরও অস্বস্তিতে ফেলেছে বিরোধীদের ‘মোদী-দিদি সেটিং’ তত্ত্ব। বিভিন্ন দুর্নীতি মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের ভূমিকা সেই তত্ত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে বলে রাজ্য নেতাদের বক্তব্য। ফলে দলেরই অনেকের মতে, রাজ্য বিজেপির এখন যা ছন্নছাড়া দশা, তাতে আগের বিধানসভার ফল ধরে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জের।