ফাইল চিত্র।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এ বার কার্যকর হচ্ছে নয়া নিয়ম। এতদিন কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকদের ছবি নির্দিষ্ট অ্যাপে আপলোড করতে হত দিনে একবার। কিন্তু ২ ডিসেম্বরের নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, এ বার থেকে কর্মরত শ্রমিকদের ছবি আপলোড করতে হবে দিনে দু’বার— কাজ শুরু এবং শেষের সময়। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় বেঁধেও দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকা ইতিমধ্যে জেলাগুলিতে পৌঁছতে শুরু করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বিজয় সরকার মানছেন, “একশো দিনের প্রকল্পে দু’বার ছবি তুলে পাঠানোর নির্দেশ এসেছে। আগে একবার ছবি পাঠাতে হত। নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করা হবে।” নির্দেশিকায় স্পষ্ট জানানো হয়েছে, সকালে কাজ শুরুর ছবি বেলা ১১টার আগে এবং কাজ শেষের ছবি দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে আপলোড করতে হবে। কর্মরত শ্রমিকদের ছবি নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে অ্যাপে আপলোড করলে চলবে না। আর ছবি না দিলে মিলবে না মজুরি।
২০০৫ সাল থেকে দেশ জুড়ে চলছে একশো দিনের কাজ প্রকল্প। কর্মক্ষম দেশবাসীকে বছরে ন্যূনতম একশো দিন কাজ দেওয়াই এর লক্ষ্য। তবে বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, কাজ না করেই শ্রমিকরা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। ভুয়ো মাস্টার রোলের ভূরি ভূরি অভিযোগও উঠত। এ সব রুখতেই অ্যাপের মতো নানা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে।
এখন দিনে দু’বার ছবি আপলোডের নির্দেশ কেন?
বিভিন্ন মহলের অনুমান, দুর্নীতি এড়াতেই এই নির্দেশ। কর্মীরা যে সশরীরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করছেন, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। অভিযোগ, একাংশ শ্রমিক একবার হাজিরা দিয়ে চলে যান। পরে যন্ত্র দিয়ে সেই কাজ সারা হয়। জেসিবি মেশিনে কাটা হয় মাটি। দু’বার ছবি তোলা বাধ্যতামূলক হলে কাজ না করে চলে যাওয়ার প্রবণতায় রাশ টানা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে গাঁ-গঞ্জে নতুন এই নিয়ম কার্যকরে কিছুটা সমস্যা হবে বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। প্রশাসনের এক সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজে মূলত মাটি কাটার কাজ হয়। গ্রীষ্মকালে ভোর ৫টা-৬টায় কাজ শুরু হয়ে যায়। ফলে, ১১টার মধ্যেই দিনের কাজ শেষ হয়ে যায়। কাজ শেষে এতদিন শ্রমিকরা বাড়ি চলে যেতেন। কিন্তু নতুন নিয়মে তাঁদের ন্যূনতম দু’টো পর্যন্ত ছবি তোলার জন্য থাকতেই হবে। মহিলা শ্রমিকদের আবার বক্তব্য, তাঁরা কাজ সেরে এত দিন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেতেন। কারণ, তারপর ঘরকন্নার কাজও সামলাতে হয়। কিন্তু দু’টো পর্যন্ত কাজ হলে সংসার শিকেয় উঠবে। ঘাটালের এক মহিলা শ্রমিকের কথায়, ‘‘দু’টোর পরে বাড়ি গেলে রান্নাবান্না করব কখন? আর বাড়ির লোকই বা খাবে কখন?’’
পুরুলিয়াতেও একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নতুন নির্দেশিকা এসেছে। জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আগে কোনও
জায়গায় কত জন শ্রমিক কাজ করছেন, তার তথ্য পঞ্চায়েত অফিস থেকে পাঠানো হত। এখন মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে কাজের জায়গা থেকেই শ্রমিকদের হাজিরার তথ্য পাঠাতে হবে।’’ বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের সূত্রও মানছে, কাজ শুরু ও শেষের সময়ে প্রকল্পের জায়গা থেকে শ্রমিকদের ছবি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করার কথা জানানো হয়েছে। সেই মোতাবেক কাজ শুরু হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মোবাইলের নেটওয়ার্কের সমস্যায় ছবি আপলোডে বিঘ্ন ঘটছে।