ব্রাত্য বসু ফাইল চিত্র।
জোরদার দাবি উঠছে প্রায় সর্বস্তরেই। কিন্তু করোনার প্রকোপ নিম্নমুখী হলেও এখনই স্কুল খোলা উচিত হবে কি না, সেই বিষয়ে অভিভাবকেরা দ্বিধাবিভক্ত। অনেক অভিভাবক এখনই স্কুল চালু করার বিপক্ষে বলে রবিবার জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
শিক্ষক দিবসে বিকাশ ভবনে শিক্ষারত্ন বিতরণের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন স্কুল খোলা ঠিক হবে কি না, সেই বিষয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষাবিদদের মতামত জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। তাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। অনেক অভিভাবকই কিন্তু এই করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল না-খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন।’’ তবে স্কুল কবে খুলবে, সেই ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানান তিনি।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুজোর পরে স্কুল খোলা হতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রী এর আগে জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই কথার ভিত্তিতে শিক্ষা দফতর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ স্কুলগুলির পরিকাঠামো ঠিকঠাক আছে কি না, তা জানতে একটি সমীক্ষাও চালায়।
এ দিকে, শিক্ষক দিবসেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় একটি টুইট বার্তায় জানান, এই রাজ্যে পার্শ্ব শিক্ষক এবং চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের প্রতি যে-‘অবিচার’ হচ্ছে, তার অবসান হোক। এই টুইট প্রসঙ্গে ব্রাত্যবাবু এ দিন বিকাশ ভবনে জানান, অন্য রাজ্যগুলিতে শিক্ষকদের অবস্থা কী, তার খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ত্রিপুরায় নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া ১০,৩২৩ জন স্থায়ী শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে। এ রাজ্যে পার্শ্ব শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের ৬০ বছরের চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। ভবিষ্যতে যদি তাঁদের কোনও ন্যায্য দাবি থাকে, তা-ও বিবেচনা করা হবে। ‘‘রাজ্যপাল মহোদয় যদি একটু ত্রিপুরার কথা বলেন...! মহারাষ্ট্রের শিক্ষকেরা এখনও সরকারের আওতার মধ্যে নেই। গুজরাতের অধিকাংশ শিক্ষক সরকারি মাইনে পান না। উনি এগুলো নিয়ে বললে ভাল লাগবে,’’ বলেন ব্রাত্যবাবু।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এ দিন ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হয়। মূল অনুষ্ঠানটি হয় বিকাশ ভবনে। ব্রাত্যবাবু ছাড়াও সেখানে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।
এ বার রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ৬১ জন শিক্ষককে শিক্ষারত্ন এবং ১১টি স্কুলকে সেরা বিদ্যালয়ের সম্মান দেওয়া হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানটিই হয় ভার্চুয়ালি। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষারত্ন প্রাপক ৬১ জন শিক্ষকের মধ্যে আছেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ডোমিনিক স্যাভিও, যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক উজ্জ্বল মৌলিক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিতের অধ্যাপিকা তনুকা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। স্কুলশিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার গনিপুর শীতলা হাইস্কুলের (উচ্চ মাধ্যমিক) প্রধান শিক্ষক সুজীব কর, হাওড়ার বাগনান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাস্কর চন্দ্র আদক প্রমুখ। শিক্ষারত্ন প্রাপকদের দেওয়া হয় কবিতা বিতান, সেরা সত্যজিৎ, বাঙালির ইতিহাস এবং নেতাজি, আ পিকটোরিয়াল বায়োগ্রাফি— এই চারটি বই। সঙ্গে ছিল ২৫ হাজার টাকা, ঘড়ি, শাল-সহ আরও কিছু উপহার। সেরা স্কুলের তকমা পেয়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের পুরুলিয়া, রামকৃষ্ণ মিশন বয়েজ হোম হাইস্কুল রহড়া, শ্রীরামপুর গার্লস হাইস্কুল-সহ ১১টি স্কুল।