উৎপাদন বন্ধ, সৌরবিদ্যুতে রাজ্যের গর্ব অন্ধকারে

দেশ-দুনিয়া জুড়ে যখন সৌর শক্তি ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে, তখন এ রাজ্যে ঘনিয়ে এসেছে অন্ধকার! রাজ্যে সৌর শক্তি ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি গত দু’বছর ধরে বন্ধ! জলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

Advertisement

প্রসূন আচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

দেশ-দুনিয়া জুড়ে যখন সৌর শক্তি ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে, তখন এ রাজ্যে ঘনিয়ে এসেছে অন্ধকার! রাজ্যে সৌর শক্তি ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি গত দু’বছর ধরে বন্ধ! জলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

Advertisement

কেবল তা-ই নয়, সৌর শক্তি নিয়ে প্রচারের জন্য কলকাতা, দুর্গাপুর এবং শিলিগুড়িতে আধা-সরকারি উদ্যোগে ‘আদিত্য’ নামের যে শো-রুম গুলি আছে, তা-ও বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে! এই শো-রুমে যে অস্থায়ী কর্মীরা অল্প বেতনে কাজ করেন, গত ৬ মাস ধরে তাঁরা বেতনও পাচ্ছেন না।

অন্ধকার এখানেই থেমে নেই! সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্য আয়লা দুর্গতদের পুনর্বাসন-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র যে কোটি কোটি টাকা দিয়েছিল, রাজ্য তা-ও খরচ করতে পারেনি। অবশেষে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল রিনিউয়েবেল এনার্জি ডেপেলপমেন্ট এজেন্সি (ওয়েবরেডা)।

Advertisement

অথচ গল্পটা হওয়ার কথা ছিল উল্টো! ওয়েবরেডা-র কাজ দেশকে পথ দেখাবে, এমনটাই আশা করেছিলেন সকলে। বাম আমলে যে ওয়েবরেডা-র খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ-বিদেশে, আজ তার কাজ নেই বললেই চলে!

ভারতে প্রথম সৌর শক্তি থেকে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রিডের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল এ রাজ্যেই। এই কেন্দ্র স্থাপন করে ওয়েবরেডা-র তৎকালীন প্রধান শান্তিপদ গণ চৌধুরী বিদেশে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বর্ধমান জেলার জামুরিয়ায় এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। পরিত্যক্ত কয়লা খনির উপরে সোলার-প্যানেল লাগিয়ে গড়ে তোলা এই প্রকল্প স্থাপন করে দিশেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই কর্পোরেশন গোটা দেশে পথ দেখিয়েছিল। তার ৬ বছরের মধ্যে রাজস্থান, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। নেওয়া হচ্ছে নিত্য-নতুন পরিকল্পনা। কেন্দ্রীয় সরকারও এর জন্য বহু টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কোন রাজ্য কত বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে, উৎপাদনের জন্য কোন রাজ্য কত টাকা ‘উৎসাহ ছাড়’ দেবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। আর প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতোই এ রাজ্য ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে!

কেবল সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রেই নয়, ধানের তুষ বা বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে বর্ধমানের ভাতার ও বাঁকুড়ার বনকাটিতে যে দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, তা-ও বন্ধ। এখানে একটিতে ১০ মেগাওয়াট, অন্যটিতে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হতো। বেসরকারি ভাবে এই বায়োমাস বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হলেও কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারই ভর্তুকি দিয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছোট মোল্লাখালিতে যে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল, হালফিল সেটাও বন্ধ। কেন এই অবস্থা? জামুরিয়ার সৌর শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০১৩ সালে ইনর্ভাটার গুলি পুড়ে যায়। তার পর থেকেই বন্ধ। অথচ ২০১২ সালে এখানে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হত। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ মেগাওয়াট। বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো যে বেসরকারি সংস্থা, তারা কেন বন্ধ করে দিল? এ ক্ষেত্রেও সরকারি উদাসীনতা। কথা ছিল, এই বিদ্যুৎ সরকার কিনে নেবে। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পরেই নতুন সরকার হাত গুটিয়ে নিল। অথচ এই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল ইউনিট প্রতি মাত্র ২ টাকা ৮০ পয়সা। কাজ করতেন প্রায় ৪০০ কর্মী। আজ তাঁরাও কর্মহারা।

এ সব দেখে হতাশ শান্তিপদবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘বাতাসে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সারা বিশ্বে এখন অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশে আমরা সবার আগে শুরু করেও পিছিয়ে গেলাম! রাজ্য সরকারের অবিলম্বে উদ্যোগী হওয়া দরকার।’’ ওয়েবরেডা-র একটি সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, কয়লার থেকে যে হেতু অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ প্রাথমিক ভাবে বেশি, তাই সরকার কোনও চেষ্টা করছে না।

ওয়েবরেডা-র ডিরেক্টর সুশান্ত দাস বলেন, ‘‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রচলিত শক্তির ব্যাপারে নতুন নীতি নেওয়া হবে। তার আগে কিছু করা সম্ভব নয়।’’ সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে প্রচারের ব্যাপারে ‘আদিত্য’-র শো-রুমগুলির গুরুত্ব স্বীকার করেও সুশান্ত বলেন, ‘‘কী হচ্ছে, খতিয়ে দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement