ফাইল চিত্র।
কৃষিকাজে সোডিয়াম সালফেটকে সার হিসেবে ব্যবহার করলে ফসলে আর্সেনিকের প্রকোপ ঠেকানো যেতে পারে বলে জানাচ্ছে আধুনিক গবেষণা। এবং সেই গবেষণার সঙ্গে জুড়ে আছে কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক গবেষণা ফলে-ফসলে আর্সেনিক নিয়ন্ত্রণে নতুন রাস্তা দেখাচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের দাবি।
আর্সেনিক-প্রবণ এলাকায় মাটির নীচের জলে ওই বিষ-রাসায়নিক মিশে থাকায় সেই জল পানের ফলে বিপদ তো ঘটেই। আবার ভূগর্ভের সেই জল সেচে ব্যবহার করার ফলে ধান এবং আনাজেও যে আর্সেনিক ঢুকছে, বার বার সে-কথা জানিয়েছেন কৃষি এবং পরিবেশবিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে বিপদ শুধু আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় সীমিত থাকছে না, চাল ও আনাজের মাধ্যমে তা রাজ্যের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। ধান-সহ নানান শস্যে সেই আর্সেনিক ঠেকাতেই নতুন পদ্ধতির সন্ধান দিচ্ছেন যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক। তাঁদের গবেষণাপত্র সম্প্রতি ‘এনভায়রনমেন্টাল পলিউশন’ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তাতেই আর্সেনিক দমনে চাষ-আবাদে সোডিয়াম সালফেট সার প্রয়োগের কথা বলেছেন গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা গবেষণা করেছেন মূলত ধানের উপরেই।
গবেষণাপত্রের মূল লেখক যাদবপুরের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের দীপাঞ্জন মৃধা। তা ছাড়া ওই বিভাগের গবেষক-অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী, ইরাবতী রায়, অয়ন দে, মধুরিমা জোয়ারদার, অন্তরা দাস, নীলাঞ্জনা রায়চৌধুরীও এই গবেষণায় যুক্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের জিৎ সরকার এবং কৃষ্ণেন্দু আচার্য এই গবেষক দলের সদস্য।
গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ধান চাষের সময় সোডিয়াম সালফেট ব্যবহার করলে আর্সেনিকগ্রস্ত অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জল চাষে ব্যবহার করা সত্ত্বেও ধানে বা ধানগাছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ঢুকতে পারছে না। উপরন্তু ফলনও ভাল হচ্ছে। তড়িৎবাবু জানান, আর্সেনিক-দূষিত জল মাটিতে দেওয়ায় ধানগাছ তা শুষে নেয়। কিন্তু সেই চাষে সোডিয়াম সালফেট ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, আর্সেনিকের মতো মারাত্মক বিষকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখছে ওই রাসায়নিক। তার ফলে ধানগাছে ওই বিষ ঢুকতে পারছে না। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পানীয় জলে আর্সেনিক-প্রকোপ যতটা চিন্তার, ধান বা আনাজে আর্সেনিকের উপস্থিতি তার থেকে কম চিন্তার নয়।